
জামাআতুল মুজাহিদীন
পরিচিতি, মূলনীতি ও আচরণবিধির সংক্ষিপ্ত মৌলিক বর্ণনা
إن الحمد لله نحمده ونستعينه ونستغفره, ونعوذ بالله من شرور أنفسنا ومن سيئات أعمالنا من يهده الله فلا مضل له, ومن يضلل فلا هادي له, وأشهد ألا إله إلا الله وحده لا شريك له, وأشهد أن محمدا عبده ورسوله صلى الله وسلم عليه وعلى آله وصحبه أجمعين, أما بعد:
- জামাআতুল মুজাহিদীনের আক্বীদাহ মানহাজ ও আনুষাঙ্গিক বিষয়াবলি সম্পর্কে উম্মাহকে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া।
- জামাআতুল মুজাহিদীনের সর্বস্তরের সদস্যদের এক ও অভিন্ন চিন্তা-চেতনায় গড়ে তোলা। এবং জামায়াহ ও জিহাদ সংশ্লিষ্ট আমলসমূহে নির্ধারিত শারঈ সীমারেখা বেঁধে দেওয়া।
- উম্মাহ’র সাধারণ মানুষের মাঝে জামাআতুল মুজাহিদীন সম্পর্কে ধারণা সুস্পষ্ট করার মাধ্যমে জিহাদের আহ্বান জানানো।
- অন্যান্য জিহাদী কাফেলাকে জামাআতুল মুজাহিদীন সম্পর্কে সম্যক অবগত করা।
- জামাআতুল মুজাহিদীন সম্পর্কে উলামায়ে সু' ও তাওয়াগিত-মুরতাদ সরকারের মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডায় বিভ্রান্ত হওয়া থেকে মুমিন-মুসলিমগণকে নিরাপদ করা।
- তানজীমের দাওয়াতি এবং আসকারি কার্যক্রমের পরিধি সাফ করা।
- এ উপমহাদেশে জিহাদি কার্যক্রম পরিচালনার বর্তমান স্ট্র্যাটেজির গুরুত্বপূর্ণ নীতিসমূহ উপস্থাপন করা।
এটি জামাআতুল মুজাহিদীন’র অনুসৃত মূলনীতি ও আচরণবিধির একটি সংক্ষিপ্ত ও মৌলিক সংকলন। এই মূলনীতি ও আচরণবিধির বিষয়সমূহ তৈরিতে নিম্নোক্ত উৎস থেকে সহায়তা নেওয়া হয়েছেঃ
- আল্লাহর কিতাবের নির্বাচিত কিছু আয়াত।
- কিছু হাদীসের মাতান বা মূল বক্তব্য।
- কয়েকটি ফিক্বহি কায়েদা।
- শাইখুল মুজাহিদীন আইমান আযযাওয়াহিরি (হাফিজাহুল্লাহ)- এর পক্ষ থেকে কার্যকর “জিহাদের সাধারণ দিকনির্দেশনা”।
- শাইখ আব্দুর রহমান (রহিমাহুল্লাহ) রচিত কিতাব “দ্বীন কায়েমের সঠিক আক্বীদাহ”।
- সনদ সূত্রে রক্ষিত শাইখ আব্দুর রহমানের(রহিমাহুল্লাহ) কিছু বক্তব্য ও চিন্তাধারা।
- বিবিধ ইলমি আলোচনা, পরামর্শ ও অভিজ্ঞতা।
উল্লেখ্য, এর অন্তর্গত অধিকাংশ বিষয়ই সুস্পষ্ট শারঈ দালীলের ভিত্তিতে সংকলিত, যেগুলো অপরিবর্তনশীল। তবে এতে কিছু কৌশলগত বিষয় সন্নিবেশিত রয়েছে যা অপরিবর্তনশীল বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তানজীম জামাআতুল মুজাহিদীন’র কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী পরিবর্তন করতে পারেন। জামাআতুল মুজাহিদীন’র সকল স্তরের কর্মী-সাথী-সদস্য এ মূলনীতি ও আচরণবিধি মেনে চলতে বাধ্য।
একজন মুসলিমের দুনিয়ার প্রকৃত সফলতা, কবরের আযাব থেকে নিরাপত্তা ও আখিরাতের মুক্তির চিন্তা হতে হবে তিনটি মূলনীতিকে কেন্দ্র করে:
- আল্লাহ আমাদের রব।
- ইসলাম আমাদের দ্বীন।
- মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ নাবী ও রসূল।
সুতরাং, আমরা অঙ্গীকার করছি,
“জীবনের সকল ক্ষেত্রে এক আল্লাহর দাসত্ব এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহর বাস্তবায়ন প্রচেষ্টায় কোনো কার্পণ্য করব না। সেই সাথে, যমীনে আল্লাহর দ্বীন তথা ইসলামের শাসন ধারা পুনরায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে দাওয়াহ ও জিহাদ-ক্বিতালের পন্থা আঁকড়ে ধরে আল্লাহ প্রদত্ত সামর্থ্যের সবটুকু আল্লারই সন্তুষ্টির জন্য বিলিয়ে দেব ইনশাআল্লাহ”।
--- রব্বানা তাক্বব্বাল মিন্না ইন্নাকা আনতাস সামীউল আলীম।
মূলত জামাআতুল মুজাহিদীনের পথ চলা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে অবস্থিত ‘মাদ্রাসা মুহাম্মদিয়া আরাবিয়া’র কিছু মেধাবী ছাত্রের চিন্তা-চেতনা থেকে। শুরুটা সেই ১৯৯২ সাল। ঐ সময় মাদ্রাসার কিছু ছাত্র যারা সশস্ত্র জিহাদের জন্য সংগঠিত হন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শাইখ নাসরুল্লাহ(রহিমাহুল্লাহ), শাইখ হাফেজ মাহমুদ (রহিমাহুল্লাহ), শাইখ আবু আব্দুল্লাহ ইবনু আব্দুল্লাহ (হাফিজাহুল্লাহ) সহ আরো অনেকে। তখন তাদের নিকট পাকিস্তান ভিত্তিক জিহাদি তানজীম “লস্কর-ই তাইয়েবা”র দাওয়াত পৌঁছে। তারা বাংলাদেশে জিহাদি তানজীম খোঁজে না পেয়ে সে তানজীমের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেন। এরপর যখন শাইখ আব্দুর রহমান (রহিমাহুল্লাহ) ১৯৯৫ সালে তাদের সাথে অত্র মাদ্রাসাতে পরিচিত হন, তখন তাকেও ‘লস্কর-ই তাইয়েবা’র দাওয়াত দেওয়া হয়। তিনি তাদের দাওয়াতে সাড়া দিয়ে জিহাদের ট্রেনিং গ্রহণ ও লস্কর-ই তাইয়েবা সম্পর্কে জানতে পাকিস্তান গমন করেন। সেখানে তিনি লস্কর-ই তাইয়েবাকে পাকিস্তান সরকারের অনুগত থেকে কাশ্মীরের জিহাদে তাদের বিভ্রান্তিকর আক্বীদাহ ও কর্মপন্থা সরেজমিনে লক্ষ্য করেন। শাইখ আব্দুর রহমান (রহিমাহুল্লাহ) নির্ধারিত ট্রেনিং শেষ করে ফিরে আসার পর ১৯৯৬ সালে সংক্ষিপ্ত কলেবরে “দ্বীন কায়েমের সঠিক পদ্ধতি” কিতাব সংকলন করেন। এ ব্যাপারে শাইখ আব্দুর রহমান (রহিমাহুল্লাহ) যাত্রাবাড়ীর মুহাম্মদিয়া আরাবিয়া মাদ্রসায় অধ্যয়নরত ও সদ্য ফারেগ হওয়া অনেক ছাত্র এবং আরো কিছু তরুণ যুবকের সাথে দীর্ঘ সময় নিয়ে আলোচনা করেন। তারা দ্বীন কায়েমের সঠিক পদ্ধতি ও কর্মপন্থা বিষয়ে শাইখ আব্দুর রহমানের (রহিমাহুল্লাহ) সাথে ঐকমত্য পোষণ করেন। এরপর শাইখ আব্দুর রহমান (রহিমাহুল্লাহ) ১৯৯৮ সালের মাঝামাঝি লস্কর-ই তাইয়েবা’র বাংলাদেশ প্রতিনিধির সাথে চূড়ান্ত বৈঠকে মিলিত হন এবং দ্বীন কায়েমের সঠিক আক্বীদাহ-মানহাজ ও কর্মপন্থা নিয়ে দফায় দফায় মিটিং করেন। লস্কর-ই তাইয়েবা তাদের ত্রুটিপূর্ণ আক্বীদাহ-মানহাজ ও কর্মপন্থায় কোনো সংশোধন আনবে না বলে স্পষ্ট জানায়। সুতরাং শাইখ আব্দুর রহমান (রহিমাহুল্লাহ) এবং তার সঙ্গীগণ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, বাংলাদেশে লস্কর-ই তাইয়েবা’র ঐ আক্বীদাহ-মানহাজকে অনুসরণ করে দ্বীন কায়েমের কাজ করা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়; তাই তারা লস্কর-ই তাইয়েবা’র সাথে সম্পর্কের ইতি টানেন।
এরপর শাইখ আব্দুর রহমান (রহিমাহুল্লাহ) নিজ সঙ্গীদের মধ্য থেকে কিছু ভাইকে বাছাই করে ১৯৯৮ সালের ২৩ শে ডিসেম্বর রমাদান মাসব্যাপী বাংলাদেশের ১৭ টি জেলাতে এক বিশেষ সফর করেন। সফরের মূল জিম্মাদার ছিলেন শাইখ আব্দুর রহমান (রহিমাহুল্লাহ) ও তাঁর সাথে চারজন সফরসঙ্গী ছিলেন শাইখ নাসরুল্লাহ (রহিমাহুল্লাহ), শাইখ সালাহুদ্দীন (হাফিজাহুল্লাহ, তানজিমের বর্তমান আমীরে মুহতারাম), শাইখ আবুল কাসেম ও শাইখ হাফেজ সানাউল্লাহ। এই সফরের উদ্দেশ্য ছিলো বাংলার মুসলিমগণ দ্বীন কায়েমের ক্ষেত্রে কী আক্বীদাহ পোষণ করে ও কোন পদ্ধতি গ্রহণ করে তা পর্যবেক্ষণ করা এবং জিহাদ-ক্বিতাল বিষয়ে এই অঞ্চলের মুসলিমদের চিন্তা-ভাবনা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা। রমাদানব্যাপী সফরের পর আবারও ১৯৯৯ সালের শুরুর দিকে সারাদেশে পৃথক তিনটি ভাগে সফর করা হয়, এক ভাগে শাইখ আব্দুর রহমান (রহিমাহুল্লাহ) এবং অপর দুই ভাগে শাইখ নাসরুল্লাহ (রহিমাহুল্লাহ) ও শাইখ সালাহুদ্দীন (হাফিজাহুল্লাহ) এর তত্ত্বাবধানে সফর সম্পন্ন হয়। পরবর্তীকালে একই সালের মাঝামাঝি সময়ে শাইখ নাসরুল্লাহ (রহিমাহুল্লাহ), শাইখ আবুল কাশেম ও শাইখ হাফেজ সানাউল্লাহ স্কলারশিপ পেয়ে শাইখ আব্দুর রহমানের (রহিমাহুল্লাহ) অনুমতিক্রমে মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের জন্য চলে যান। প্রায় বছরব্যাপী শাইখ আব্দুর রহমান (রহিমাহুল্লাহ) ও তার সঙ্গীগণ দেশের বিভিন্ন ইসলামি দল ও আফগান ফেরত মুজাহিদীনদের দ্বারা গঠিত দলের নেতৃবর্গ ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের বাংলার ভূমিতে দ্বীন কায়েমের জন্য ক্বিতালের পদ্ধতি গ্রহণের আহ্বান জানান। পুরাতন দলের বিদ্যমানতায় নতুন করে আবারও একটি ইসলামি জিহাদি দলের আবির্ভাব হোক এটা শাইখ আব্দুর রহমান(রহিমাহুল্লাহ) এবং তার সঙ্গীগণ চাননি। কিন্তু দেশের শীর্ষ পর্যায়ের রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংস্কারপন্থী ইসলামি দল এবং আফগান ফেরত মুজাহিদীন দলের কেউ বাংলার ভূমিতে দ্বীন কায়েমের জন্য ক্বিতালের পদ্ধতি গ্রহণ করতে রাজি হননি। অবশেষে ১৯৯৯ সালের ১৯ মতান্তরে ২৪ শে নভেম্বর ঢাকা বাসাবোর কদমতলার ইয়াসিন মঞ্জিলের ভাড়া বাসাতে জামাআতুল মুজাহিদীনের প্রথম আনুষ্ঠানিক শুরাবোর্ড গঠিত হয়। সে বৈঠকে শাইখ আব্দুর রহমানকে(রহিমাহুল্লাহ) আমীর মনোনীত করা হয় এবং তিনি তাঁর শুরাতে শাইখ হাফেজ মাহমুদ(রহিমাহুল্লাহ্), শাইখ সালাহুদ্দীন (হাফিজাহুল্লাহ), শাইখ শাহেদ বিন হাফিজ ও রানাকে অন্তর্ভুক্ত করেন। অল্পদিনের মধ্যে বাংলাদেশে সমাজ বিপ্লবের চিন্তাধারার এক তানজীমের নেতৃস্থানীয় কিছু লোকের চক্রান্তের স্বীকার হয়ে শাইখ সাহেদ বিন হাফিজ ও রানা নিজেদেরকে তানজীম থেকে গুটিয়ে নেন। শাইখ আব্দুর রহমান (রহিমাহুল্লাহ) তাদের সাথে একাধিক বৈঠক করে তাদেরকে তানজীমভুক্ত থাকার বিষয়ে চেষ্টা চালান কিন্তু তারা আর ফিরে আসেনি। তাদের শুরা পদকে বাতিল ঘোষণা করে শাইখ খালেদ সাইফুল্লাহকে (রহিমাহুল্লাহ) শুরাতে অন্তর্ভুক্ত করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে ২০০০-২০০১ সালের মধ্যে আসাদুজ্জামান হাজারি(হাফিজাহুল্লাহ), শাইখ আব্দুল আউয়াল (রহিমাহুল্লাহ), শাইখ নাসরুল্লাহ (রহিমাহুল্লাহ), শাইখ সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই (রহিমাহুল্লাহ) ও শাইখ আতাউর রহমান সানী (রহিমাহুল্লাহ) শুরাতে অন্তর্ভুক্ত হন।
“জামাআতুল মুজাহিদীন” মূলত মুসলিম উম্মাহর একটি ঐতিহাসিক দালীল, একটি অনুপ্রেরণাদায়ক ব্যানার। এই ব্যানার ব্যবহার করেছিলেন পাক-ভারত উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ও সশস্ত্র যুদ্ধের অন্যতম সিপাহসালার সাইয়্যিদ আহমাদ শহীদ (রহিমাহুল্লাহ) ও তার সুযোগ্য সেনাপতি শাহ ইসমাইল শহীদ (রহিমাহুল্লাহ), যারা ১৮৩১ ইসায়ী সনের মে মাসের ছয় তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশদের দালাল ‘শিখ’ মুশরিক শক্তির মুখোমুখি হয়ে বালাকোটের যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন। উল্লেখ্য, বালাকোট বর্তমান পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের মানসেহরা জেলার একটি শহর। এই শহরের ‘সাতবান’ নামক পাহাড়ি ঝর্ণার উপরিভাগে উক্ত বালাকোট যুদ্ধের মূল পর্বে সাইয়্যিদ আহমাদ শহীদ (রহিমাহুল্লাহ) ও শাহ ইসমাইল শহীদ (রহিমাহুল্লাহ) সহ সাতশত মুজাহিদের(রহিমাহুমুল্লাহ) অধিকাংশই শাহাদাত বরণ করেন। উম্মাহর জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক উক্ত ঘটনায় শহীদ মুজাহিদদের ব্যানার তথা “জামাআতুল মুজাহিদীন” নামটিই শাইখ আব্দুর রহমান (রহিমাহুল্লাহ) পুনরায় সামনে আনার চেষ্টা করেছেন।
শাইখ আব্দুর রহমান (রহিমাহুল্লাহ) এর অনেক বক্তব্য থেকেই এটা স্পষ্ট হওয়া যায়, তিনি কেবল তাঁর সংগঠনের নাম হিসাবে “জামাআতুল মুজাহিদীন” নামটি ব্যবহার করতে চাননি, বরং তিনি এর মধ্য দিয়ে প্রায় দুইশত বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত “জামাআতুল মুজাহিদীন”র চেতনার হাল ধরতে চেয়েছেন। তিনি তাঁর বক্তব্য বা আলোচনাতে প্রায়ই বলতেন, “সাইয়্যিদ আহমদ শহীদের (রহিমাহুল্লাহ) গড়া জামাআতুল মুজাহিদীন যে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলো সেই ব্রিটিশদের আইন দ্বারাই এখন আমাদের দেশ চলছে। সুতরাং আমরাও বালাকোটের শহীদগণের ধারায় ব্রিটিশদের বর্তমান প্রেতাত্মাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অব্যাহত রাখবো এবং প্রয়োজনে সবাই শহীদ হয়ে যাবো”।
বর্তমান বাংলাদেশের কয়েকটি জেলায়, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের কিছু এলাকা ও হবিগঞ্জে সরাসরি বালাকোট জিহাদে অংশগ্রহণকারী গাজীগণের কারো কারো কবর রয়েছে, তাদের মধ্যে হবিগঞ্জের লাখাইতে কবরস্থ গাজী উবাইদুল্লাহ (রহিমাহুল্লাহ) অন্যতম। এছাড়া উত্তরবঙ্গের দিনাজপুর জেলাতে তৎকালীন ব্রিটিশ বিরোধী মুজাহিদীন জামাআতের বাংলার আমীর মিজানুর রহমানের (রহিমাহুল্লাহ) বংশ পরিক্রমার কিছু উত্তরসূরীও বসবাস করেন। ১৯৯৯ সালে তাদের আমীর ছিলেন শাইখ নাজমুল হক হামদানি (রহিমাহুল্লাহ), তিনি নিজেদের মাঝে আমল ও ইসলাহিয়াতের বাইয়াহ নিতেন, এটা ছিলো অনেকটা পীর-মুরীদের বাইয়াহ’র ন্যায়। তিনি বংশ পরম্পরায় এমনটা করে আসছিলেন, যা একটি সামাজিক তানজীমের কার্যক্রমে সীমাবদ্ধ ছিল। এসব কার্যক্রমের বিস্তৃতি ঘটেছিলো বগুড়া, রংপু্র, দিনাজপু্র, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁ ও পঞ্চগড়ের ‘আহলে হাদিস’ অধ্যুষিত কিছু এলাকায়। শাইখ আব্দুর রহমান (রহিমাহুল্লাহ) ও তাঁর সহচরগণ এসকল জেলাতে তাদের কয়েকটি পরিবার এবং কয়েকজন মুরব্বীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। তাদের আমীর শাইখ নাজমুল হক হামদানি (রহিমাহুল্লাহ) ও তাঁর ভাইদের সাথেও সাক্ষাৎ করেন। শাইখ (রহিমাহুল্লাহ) তাদের সাথে পুরোনো ঐ জামাআতুল মুজাহিদীনের জিহাদের ধারাকে পুনরুজ্জীবিত করার উপায় নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু তাঁরা নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জ নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন ও শাইখ আব্দুর রহমানকে (রহিমাহুল্লাহ) এক পর্যায়ে জামাআতুল মুজাহিদীনের জিহাদি কাফেলাকে পুনরায় সামনে এগিয়ে নেওয়ার ইজাযাহ দেন, এবং তাঁর কাজে সমর্থন ও সহায়তার আশ্বাস দেন। পরবর্তীকালে তানজীম প্রতিষ্ঠার পর ২০০০ সালের শুরুতে ঢাকার কদমতলার ইয়াসিন মঞ্জিলে একটি ৩ দিনের মুয়াস্কার শিবিরে বয়োবৃদ্ধ শাইখ নাজমুল হক হামদানি(রহিমাহুল্লাহ) এসে তিনদিনের তালীম গ্রহণ করেন ও শাইখ আব্দুর রহমানকে (রহিমাহুল্লাহ) বাইয়াহ প্রদান করেন। সুতরাং, শাইখ আব্দুর রহমান(রহিমাহুল্লাহ)এর গড়া এই জামাআতুল মুজাহিদীন মূলত দুইশত বছরের পুরোনো সাইয়্যিদ আহমাদ শহীদ (রহিমাহুল্লাহ) এর গড়া ঐতিহ্যবাহী জামাআতুল মুজাহিদীনেরই নতুন প্রজন্ম।
শাইখ আব্দুর রহমান (রহিমাহুল্লাহ) মদীনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের كلية الدعوة و اصول الدين (আদ-দাওয়াহ ওয়া উসুলুদ্দীন অনুষদ) থেকে উচ্চতর শিক্ষা সমাপ্ত করেন। বিশ শতকের আশির দশকের একটা উল্লেখযোগ্য সময় তিনি মক্কা, মদিনা ও আরব বিশ্বের বিশিষ্ট অনেক উলামা-মাশায়েখের সাহচর্য লাভ করেছিলেন, তাদের থেকে আল্লাহর দেওয়া তাওফীক্ব মোতাবেক ইলম আহরণ করতে পেরেছিলেন, আলহামদুলিল্লাহ। ঐ সময়ে বিলাদ আল হারামাইনের অন্যতম শায়খাইন, শাইখ বিন বায (রহিমাহুল্লাহ) (১৯১০-১৯৯৯) , শাইখ উসাইমীন (রহিমাহুল্লাহ) (১৯২৯-২০০১) সহ অন্যান্য খ্যাতনামা শত শত আলেমে দ্বীন বাদশার প্রভাব বলয় থেকে মুক্ত ছিলেন। ইলম চর্চা, বিতরণ ও সত্য প্রকাশে তারা দ্বিধাহীন ছিলেন। তবে পরবর্তী সময়ে নষ্টের দিকে ব্যাপক পরিবর্তন শুরু হয়েছে বিশ শতকের শেষ দশকে। যাই হোক, শাইখ আব্দুর রহমান (রহিমাহুল্লাহ) মুসলিম নামধারী শাসকদের দ্বারা শারীয়াহর সীমারেখা লঙ্ঘন, তাদের ত্বগুত হওয়া, আল-কুরআনের বিধান দ্বারা বিচার-ফয়সালা না করার পরিণাম, মুসলিম নামধারী শাসকদের বিরুদ্ধে ক্বিতাল পরিচালনা এ বিষয়গুলোতে তিনি বিশেষভাবে প্রভাবিত ছিলেন তদানীন্তন সময়ে আরব বিশ্বের বিশিষ্ট আলিম মিশরের ড.খাইর হাইকাল ও তার লেখনীর দ্বারা। ড.খাইর হাইকালের অন্যতম কিতাব ‘আল জিহাদ ওয়াল ক্বিতাল ফি সিয়াসাতিশ শারইয়্যাহ’। এটা তার ডক্টরেট থীসিস বুক। প্রায় দুই হাজার পৃষ্ঠার এই কিতাব জিহাদ সম্পর্কিত বিষয়াবলির দালীল ও বিশ্লেষণের অত্যন্ত উপকারী এক সমাহার, আলহামদুলিল্লাহ। শাইখ আব্দুর রহমান (রহিমাহুল্লাহ) ‘জামাআতুল মুজাহিদীন’ গঠনের পূর্বেই ১৯৯৬ সালে সংক্ষিপ্ত কলেবরে “দ্বীন কায়েমের সঠিক পদ্ধতি” কিতাব সংকলন করেন। পরবর্তীকালে ১৯৯৯ সালে জামাআতুল মুজাহিদীনের কাজ শুরুর প্রাক্কালে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত আরো একটি কিতাব সংকলন করেন। কিতাবটির নাম ‘আল আক্বীদাতুস সাহীহাহ লি ইকামাতিদ দ্বীন’ (দ্বীন কায়েমের সঠিক আক্বীদাহ)। অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত কলেবরের এই কিতাবে তিনি সমাজে দ্বীন কায়েমের ত্রুটিপূর্ণ আক্বীদাহসমূহের পরিচিতি, ইসলামি হুকুমাত কায়েমের গুরুত্ব, ত্বগুত শাসকদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদের দালীলাদি, গণতান্ত্রিক পথ-পন্থার অসাড়তা, জিহাদ বাস্তবায়নের কর্মপন্থা, এসকল বিষয়ে আলোচনা করেছেন। কিতাবটিতে তিনি ড.খাইর হাইকালের উপর্যুক্ত কিতাব থেকে অনেক উদ্ধৃতিও দিয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ।
শাইখ আব্দুর রহমান (রহিমাহুল্লাহ) বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডে প্রথম ব্যক্তি যিনি নামধারী মুসলিম শাসকদেরকে শারীয়াহ’র মানদণ্ডের আলোকে ত্বগুত আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে করণীয় তুলে ধরেছেন এবং নিজ ভূখণ্ডে জিহাদি কাফেলার নেতৃত্ব দিয়ে ত্বগুতের বিরুদ্ধে সাধ্যানুযায়ী জিহাদি আমল করার চেষ্টা করেছেন এবং ত্বগুতের ফাঁসির কাষ্ঠে প্রাণ দিয়েছেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা তাকে কবুল করুন।
হ্যা! এটা স্বীকার করছি যে, ত্বগুতের পরিচয় তুলে ধরার ক্ষেত্রে কিছু ব্যক্তি বা কোনো সংগঠন শাইখ আব্দুর রহমানের (রহিমাহুল্লাহ) অগ্রবর্তী হবেন। তবে তাঁদের চেষ্টা ঐ পরিচয় তুলে ধরা বা প্রচারণা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিলো। ত্বগুতের বিরুদ্ধে জিহাদ-ক্বিতালের চেষ্টায় আমরা কাউকে সামনে দেখিনি।
সেই সাথে, আমরা সবদিক থেকে মূল্যায়ণ করে বলতে পারি শাইখ আব্দুর রহমান (রহিমাহুল্লাহ) রচিত "দ্বীন কায়েমের সঠিক আক্বীদাহ" বইটি মুসলিম নামধারী শাসকদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদের দালীল হিসাবে ঐ সময়ে বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম ও একমাত্র কিতাব। পরবর্তী প্রায় এক দশকেও আমরা অনুরূপ কোনো কিতাব বাংলা ভাষায় দেখিনি। এরপর আমরা চলমান দশকে বৃহত্তর কলেবরে অনেক কিতাব উক্ত বিষয়ে দেখছি, কিন্ত সংক্ষিপ্ত পরিসরে ওটাই এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে উপকারী হিসাবে বিবেচিত হওয়ার দাবী রাখে,আলহামদুলিল্লাহ।
১৯৯৮ সালে আনুষ্ঠানিক কাজ শুরুর পর ১৯৯৯ সালে আমীর মনোনয়নের সময় থেকে গ্রেফতার হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আমীর ছিলেন শাইখ আবদুর রহমান (রহিমাহুল্লাহ)। উল্লেখ্য ২০০৬ ইসায়ী সনের ২রা মার্চ তারিখে শাইখ আব্দুর রহমান (রহিমাহুল্লাহ) ত্বগুতের হাতে বন্দি হন। এরপর ২০০৭ সনের ২৯শে মার্চ মধ্য রাতে তাকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি দেওয়া হয় (আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা তাকে শহীদ হিসাবে কবুল করুন)।
২০০৬ ইসায়ী সনের জুন মাসের প্রথম দিকে এক শুরা বৈঠকে জামাআতুল মুজাহিদীনের ভারপ্রাপ্ত আমীর নির্বাচিত হন শাইখ সাইদুর রহমান (ফাক্কাল্লাহু আসরাহু)। পরবর্তীকালে ২০০৭ সালের ২৯শে মার্চ শাইখ রহিমাহুল্লাহ’র শাহাদাতের পর শাইখ সাইদুর রহমান (ফাক্কাল্লাহু আসরাহু) স্থায়ী আমীর মনোনীত হন। তিনি ২০০৩ সাল থেকেই জামাআতুল মুজাহিদীনের একজন বিজ্ঞ আলিম হিসাবে দীনের খিদমাতে নিয়োজিত আছেন। জামাআতুল মুজাহিদীনের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার পূর্বে শাইখ সাইদুর রহমান (ফাক্কাল্লাহু আসরাহু) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আশির দশকের একজন শুরা সদস্য ছিলেন। তিনিই প্রথম শুরা সদস্য যিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে গণতন্ত্রের পথে না হাটার বিষয়ে শুরা বৈঠকে জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন ও প্রতিবাদ করেছিলেন। কিন্তু জামায়াত আক্বীদাহতে পরিবর্তন না আনার কারণে স্বেচ্ছায় জামায়াত ত্যাগ করেন ও মুজাহিদীন তানজীমের সন্ধানে থাকেন। পরবর্তীকালে তিনি ব্রিটেন ভিত্তিক তানজীম ‘আল মুহাজিরুন’র সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেন ও এক পর্যায়ে ২০০৩ সালে জামাআতুল মুজাহিদীনের সন্ধান পান। শাইখ সাইদুর রহমান (ফাক্কাল্লাহু আসরাহু) জামাআতুল মুজাহিদীনের আমীরের দায়িত্ব পালন করাবস্থায় ২০১০ সালের মে মাসের একুশ তারিখে ত্বগুতের হাতে বন্দি হন। বর্তমানে তিনি অসুস্থাবস্থায় কারাগারে বন্দি রয়েছেন (আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা তাঁকে কল্যাণের সাথে সুস্থতা ও মুক্তি দান করুন)।
২০১৪ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারী জামাআতুল মুজাহিদীনের কিছু সাহসী মুজাহিদ ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে ত্বগুতের বন্দিদশা থেকে মুক্ত করেন শাইখ আব্দুর রহমানের (রহিমাহুল্লাহ) সময়কাল থেকে জামাআতুল মুজাহিদীনের মাজলিসে শূরার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা দুই সদস্য শাইখ সালাহুদ্দীন (হাফিজাহুল্লাহ) ও শাইখ হাফেজ মাহমুদ (রহিমাহুল্লাহ)সহ আরও একজনকে। ত্বগুতের হাত থেকে বন্দি মুজাহিদদের মুক্ত করার ঘটনা বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এ পর্যন্ত এটাই প্রথম, আলহামদুলিল্লাহ। মুক্ত হওয়ার পর শাইখ সালাহুদ্দীন (হাফিজাহুল্লাহ) নতুন আমীর মনোনীত হন। এখন পর্যন্ত তিনিই সংগঠনের আমীর হিসাবে বহাল রয়েছেন।
মূলতঃ জামাআতুল মুজাহিদীনের বিগত দুই দশকে পূর্ণাঙ্গ আমীর হলেন উপর্যুক্ত তিনজন। এর মাঝে বিশেষ কোনো প্রেক্ষাপটে খণ্ডকালীন বা ভারপ্রাপ্ত আমীরের দায়িত্বে সময়ের ভিন্নতায় যারা ছিলেন, তাদের নাম এখানে দেওয়া হয়নি। এছাড়া ২০১০ সালে শাইখ সাইদুর রহমানের(ফাক্কাল্লাহু আসরাহু) গ্রেফতার পরবর্তী ঘটনা প্রবাহে ২০১৪ সালে শাইখ সালাহুদ্দীনের(হাফিজাহুল্লাহ) দায়িত্ব নেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সংগঠনটির মাঝে আমীর নির্ধারণে কিছুটা মতপার্থক্য দেখা দেয়। আমরা ঐ সময়ে দায়িত্ব পালনকারীদেরকে ভারপ্রাপ্ত ও নির্দিষ্ট অংশের আমীরদের তালিকায় রেখেছি। কেননা শাইখ সালাহুদ্দীনের (হাফিজাহুল্লাহ) উপস্থিতিতে সংগঠনটির সবধরণের মতপার্থক্য মিটে যায় এবং সবাই তাকে আমীর হিসাবে মেনে নেয়।
- জামাতুল মুজাহিদীন এক আল্লাহর দাসত্বে বিশ্বাসী সম্পূর্ণ স্বাধীন ও স্বতন্ত্র একটি তানজীম বা সংগঠন। এটি আলহামদুলিল্লাহ কোন ইসলাম বিমুখ ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংস্হা, দল বা দেশের প্রতিনিধিত্ব কিংবা লেজুড়বৃত্তি এক মূহূর্তের জন্যও করেনি এবং করবে না ইনশাআল্লাহ।
- জামাআতুল মুজাহিদীন ভারত উপমহাদেশীয় একটি তানজীম। এর তানজীমি কার্যক্রম বাংলাদেশে শুরু হয়ে ভারতে ক্রমবিস্তৃত হচ্ছে, আলহামদুলিল্লাহ। নিকট কিংবা দূর ভবিষ্যতে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ঠিক রেখে এর তানজীমি কার্যক্রম এই দুইটি দেশের বাইরেও চালু করার পরিকল্পনা থাকবে ইনশাআল্লাহ। এ উপমহাদেশে ইসলামি ইমারাহ প্রতিষ্ঠা এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ভূখণ্ডে ইসলামি ইমারাহ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী খিলাফাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে জামাআতুল মুজাহিদীন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
- জামাআতুল মুজাহিদীন বৈশ্বিক জিহাদের বিভিন্ন ভূমি ও তানজীমের, বিশেষতঃ ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান ও তানজীম আল কায়েদাতুল জিহাদের অন্যতম শুভাকাঙ্ক্ষী এবং তাদের কর্মধারার অনুসারী।
- জামাআতুল মুজাহিদীন মুসলিমদের মাঝে বিভিন্ন দল-উপদলের সৃষ্টি বা বিদ্যমানতা সমর্থন করে না। বিপরীতে, আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে ঐক্যবদ্ধতাকে ওয়াজিব মনে করে। তবে বৃহত্তর লাভ-ক্ষতি বিবেচনায় শত্রুর বিপরীতে কৌশলের অংশ হিসাবে ঐক্যবদ্ধতার বিষয়টিকে; বিশেষত ব্যবস্থাপনার দিক থেকে প্রয়োজনানুসারে নির্দিষ্ট বা অনির্দিষ্ট পরিসর ও সময়ের জন্য গোপন রাখা দূষণীয় মনে করে না।
- একটু সময় নিন। সত্যান্বেষণে নিজের অন্তরকে উন্মুক্ত করুন।
- শাইখ আব্দুর রহমান (রহিমাহুল্লাহ) সম্পর্কে ও তার সংকলিত অত্যন্ত ছোট কিতাবটি (দ্বীন কায়েমের সঠিক আক্বীদাহ) একটু দেখে নিন।
- (২০০০-২০১৮) জামাআতুল মুজাহিদীনের নাস্তিক-মুরতাদ খতম অভিযান, ইসলাম বিরোধী এনজিও ধ্বংসকরণ অভিযান, নাহী আনিল মুনকার ও ত্বগুত বিরোধী অন্যান্য অভিযান নিয়ে পড়ালেখা করুন।
- রাজশাহী বিভাগে সর্বহারা সন্ত্রাসীদের মহারাজ্যে ২০০৪ সালে "বাংলা ভাইয়ের অভিযান" নামে পরিচিত ঐতিহাসিক “মাজলুমের মুক্তি” অভিযান নিয়ে স্টাডি করুন।
- আপনার প্রশ্ন ও সংশয় নিয়ে শহীদ শাইখ আব্দুর রহমান (রহিমাহুল্লাহ) ও তাঁর সঙ্গীদের যারা পাশে ছিলেন তাদের সাথে সরাসরি কথা বলুন।
এই আমলগুলো করার পর আপনার কাছে জামাআতুল মুজাহীদিনের আক্বীদাহ, মানহাজ এবং কর্মপন্থার ব্যাপারে যাবতীয় বিভ্রান্তি-সংশয় নিরসন হবে ইনশাআল্লাহ।
জামাআতুল মুজাহিদীন অবশ্যই স্বীকার করে, ‘আমরা দুর্বল, আমাদের বহুমুখী ত্রুটি অবশ্যই ছিলো, অতীতে যারা কাজ করেছে তাদেরও কম বা বেশী ত্রুটি ছিলো এবং ভবিষ্যতে যারা কাজ করবে তাদেরও নির্ভুল হওয়ার কোনো সুযোগ নেই’। তাই বলে নিজেদের ত্রুটির জন্য জিহাদই পরিত্যাগ করতে হবে, কিংবা অন্যের ত্রুটি ধরে ধরে তাকে জিহাদ থেকেই নিরুৎসাহিত করা হবে, ঈমান আমলের জন্য এমন ক্ষতিকর তত্ত্বে জামাআতুল মুজাহিদীন বিশ্বাস করে না। বরং জামাআতুল মুজাহিদীন মনে করে আল কুরআনের নিম্নোক্ত আায়াতগুলোতে নিজের ও অন্যের ত্রুটির বিপরীতে যথেষ্ট করণীয় নির্দেশক বিষয়ের উপস্থিতি আছেঃ
وَكَأَيِّن مِّن نَّبِيٍّ قَاتَلَ مَعَهُ رِبِّيُّونَ كَثِيرٌ فَمَا وَهَنُواْ لِمَا أَصَابَهُمْ فِي سَبِيلِ اللّهِ وَمَا ضَعُفُواْ وَمَا اسْتَكَانُواْ وَاللّهُ يُحِبُّ الصَّابِرِينَ
আর বহু নাবী ছিলেন,যাদের সঙ্গী-সাথীরা তাদের অনুবর্তী হয়ে ক্বিতাল করেছেন; আল্লাহর পথে-তাদের কিছু কষ্ট হয়েছে বটে, কিন্তু তারা দুনিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়েননি, দুর্বল হয়ে যাননি এবং মনোবল হারাননি। আর যারা সবর করে, আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন। (সূরা আলে-ইমরান ৩:১৪৬)وَمَا كَانَ قَوْلَهُمْ إِلاَّ أَن قَالُواْ ربَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِي أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
তাদের মধ্যে হা-হুতাশের কোনো কথাই ছিলো না। তারা কেবল বলতো, হে আমাদের রব! আমাদের পাপগুলো এবং আমাদের কাজে-কর্মে যা কিছু বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে এ সবই তুমি ক্ষমা করে দাও। আর আমাদের পা গুলো দৃঢ় রাখ এবং কাফিরদের উপর আমাদিগকে সাহায্য কর। (সূরা ইমরান ৩:১৪৭)وَالَّذِينَ جَاؤُوا مِن بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِّلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ
এবং যারা তাদের পরে আগমন করেছে। তারা বলেঃ হে আমাদের রব! আমাদেরকে এবং ঈমানে অগ্রণী আমাদের ভাইগণকে তুমি ক্ষমা কর এবং ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের রব! তুমি পরম দয়ালু, ক্ষমাকারী। (সুরা হাশর ৫৯:১০)
আলহামদুলিল্লাহ, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আক্বীদাহ’র সাথে জামাআতুল মুজাহিদীনের আক্বীদাহ’র কোনই পার্থক্য নেই। জামাআতুল মুজাহিদীন আক্বীদাহ সংক্রান্ত ইলম চর্চার বেলায় সালফে সালেহীন ইমামগণের (রহিমাহুমুল্লাহ) লেখনীর সহায়তা নিয়ে থাকে। এছাড়া সহীহ আক্বীদাহ’র সাথে সাংঘর্ষিক যে কোনো চিন্তা, মতবাদ, বিশ্বাস ও বক্তব্য জামাআতুল মুজাহিদীন কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করে থাকে, আলহামদুলিল্লাহ।
উল্লেখ করা যেতে পারে, আক্বীদাহ’র পাঠ ও পঠনে নিম্নোক্ত কিতাবাদি জামাআতুল মুজাহিদীনের সিলেবাসের অন্তর্ভুক্তঃ
- ইমাম আবু হানিফা (রহিমাহুল্লাহ) রচিত “আল ফিকহুল আকবার”।
- ইমাম ত্বহাবী (রহিমাহুল্লাহ) রচিত “আল আক্বীদাতুত ত্বহাবী”।
- ইমাম ইবন তাইমিয়া (রহিমাহুল্লাহ) রচিত “আল আক্বীদাতুল ওয়াসিতিয়াহ”।
- শাহ ওয়ালীউল্লাহ (রহিমাহুল্লাহ) রচিত “আল আক্বীদাতুল হাসানাহ”।
এছাড়া, সমসাময়িক উলামা এবং বিভিন্ন মুজাহিদ শাইখদের আক্বীদাহ সম্পর্কিত লেখনী থেকেও জামাআতুল মুজাহিদীন উপকার নিয়ে থাকে, যা উপর্যুক্ত ধরণের কিতাবাদি থেকেই সহজ ভাষায় সংকলন করা হয়েছে মাত্র, সুতরাং আলহামদুলিল্লাহ।
জামাআতুল মুজাহিদীনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো আল্লাহ রব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জন। চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যম হিসাবে জামাআতুল মুজাহিদীন প্রাথমিক যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়ন করতে চায় তা নিম্নরূপঃ
- উম্মাহ’র আক্বীদাহ পরিশুদ্ধ করণ তথা শিরক বর্জনের মাধ্যমে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার আহ্বান।
- এ অঞ্চলের আসলি কুফ্ফার(হারবি) শক্তির বিরুদ্ধে ক্বিতাল করা এবং মুসলিমদেরকে ক্বিতালের আহ্বান করা। এবং মুসলিম নামধারী ত্বগুত শাসকদের ইরতিদাদের বাস্তবতা সকলের সামনে পরিষ্কার করা। তাদের উৎখাত করে দ্বীন প্রতিষ্ঠার ডাক দেওয়া এবং এ ব্যাপারে পূর্ব থেকে চলে আসা যাবতীয় সংশয় নিরসন ও অপনোদন করা।
- উপমহাদেশের আরাকান, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, কাশ্মীর, বাংলাদেশ সহ অন্যান্য মাযলুম মুসলিম জনপদসমূহে সাহায্যের হাত বাড়ানো।
- গাজওয়াতুল হিন্দের জন্য উম্মাহকে জাগ্রত করা।
- মুসলিমদের হারানো খিলাফাহ পুনরুদ্ধারের জন্য উম্মাহকে আহ্বান এবং তাদেরকে এ ব্যাপারে সচেতন করা।
- এ অঞ্চলে ইমারাহ প্রতিষ্ঠা এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ভূখণ্ডে ইসলামি ইমারাহ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী খিলাফাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথকে সুগম করা।
- যমীনে জিহাদ-ক্বিতালের ধারা অব্যাহত রাখা।
তানজীম শারীয়াহ নির্দেশিত ও নির্ধারিত প্রকৃত জিহাদ ফি সাবীলিল্লাহ এবং এ সংশ্লিষ্ট সকল উপায়-উপকরণের মাধ্যমে ইসলামি হুকুমাত পুনঃপ্রতিষ্ঠায় চেষ্টারত। এক্ষেত্রে,
- দাওয়াহ-তাবলীগ-তাহরীদ,
- তালীম- তাদরীব-তারবিয়াহ (শিক্ষা-প্রশিক্ষণ) এবং
- ক্বিতাল ও ক্বিতাল সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহই মূল তানজীমি কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত।
- তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ববাদ।
- এক আল্লাহর ইবাদত।
- শিরক, কুফর ও ত্বগুত এবং ভ্রান্ত ফিরক্বাহ ও মানব রচিত মতবাদ বর্জন।
- আল্লাহর ইচ্ছার নিকট পূর্ণ আত্মসমর্পণ।
- আল কুরআনের আদেশ, নিষেধ, উপদেশ ও নির্দেশনার আলোকে করণীয় নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
- সুন্নাতে রসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুসরণ।
- খুলাফায়ে রাশেদ্বীন, ইজমায়ে সাহাবা ও পরবর্তী সালফে সালেহীনদের ধারার অবিচ্ছিন্নতা বজায় রাখা।
- ফিক্বহি মাযহাবের বিভিন্নতা যাই হোক, সালফে সালেহীনের ধারার উপর প্রতিষ্ঠিত বর্তমান সময়ের আলিমগণের যথাযথ মূল্যায়ণ।
- তাক্বওয়া, আদল ও ইহসান অবলম্বনে হাক্কুল ইবাদ আদায়।
- ভ্রাতৃত্ব ও ইতিসামের পুনর্জাগরণ।
- আল্লাহর দিকে দাওয়াহ।
- আমর বিল মারুফ ওয়া নাহী আনিল মুনকার।
- আল জিহাদ ওয়াল ক্বিতাল।
- সকল ক্ষেত্রে ও সকল বিষয়ে ইসলামি শারীয়াহ’র প্রাধান্য বজায় রাখা।
- আল ওয়ালা ওয়াল বারাআহ পর্বে দৃঢ়তা অবলম্বন।
জামাআতুল মুজাহিদীন কোনো তাকফীরি ফিরক্বাহ’র অনুসরণ করে না। এই তানজিম কোনো তাকফীরি তানজীম নয়। জামাআতুল মুজাহিদীন বিশ্বাস করে, আল কুরআন ও সুন্নাহতে যাদেরকে কাফির-মুশরিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে তারা অবশ্যই কাফির। সেই সাথে সালফে সালেহীন ইমামগণ (রহিমাহুমুল্লাহ) দালায়েলের আলোকে যেসকল বাতিল ফিরক্বাহ’র ধারকদের কাফির সাব্যস্ত করেছেন, এই সাব্যস্তকরণ জামাআতুল মুজাহিদীন মেনে নেয়।
জামাআতুল মুজাহিদীন সাধারণ মুসলিমকে কুফর বা শির্কে লিপ্ত দেখলেই তাকফীর করে না বরং তার সাথে দাওয়াহ ও ইসলাহর নীতি গ্রহণ করে এবং যথাসাধ্য সংশোধনের চেষ্টা চালায়। তবে কারো বিষয়ে জরুরি হলে বিশেষ "শারীয়াহ কাউন্সিল" তাকফীরের মূলনীতির আলোকে সিদ্ধান্ত নিবেন। অন্য সদস্যদের এ বিষয়ে ইজতিহাদের কোন প্রয়োজন নেই। এ ব্যাপারে তানজীম সবাইকে সতর্ক করে এবং সচেতন হতে বলে।
‘জামাআতুল মুজাহিদীন’ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’র সকল মাযহাবের অনুসারীদের যৌথ অঙ্গন। এই তানজীম মনে করে, ইসলামি শারীয়াহ’র মৌলিক বিষয়াবলিতে সকল মাযহাবের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত আছে। ফুরুঈ বা শাখা-প্রশাখামূলক মাসআলায় প্রত্যেক মাযহাবের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ইমামগণ (রহিমাহুমুল্লাহ) তাদের নিকট উপস্থিত থাকা দালীল-আদীল্লাহ দ্বারা ইজতিহাদ করেই নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই তানজীম সকলকে নির্দেশনা দেয়,
- হানাফী, শাফেয়ী, হাম্বলী, মালেকী, যাহেরী, আহলে হাদীস সহ সকল মাযহাবের পূর্ববর্তী ইমাম ও আলিমগণকে (রহিমাহুমুল্লাহ) যথাযথ সম্মান দেখাতে এবং প্রত্যেক মাযহাবের বর্তমান আলিমগণের সাথে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সম্পর্ক বজায় রাখতে।
- মাযহাব বিষয়ে যাবতীয় বিতর্ক বা ঝগড়া এড়িয়ে চলতে হবে।
- তানজিম কোনো মাযহাবের কোনো ইমামকে নিয়ে বা মাযহাবের আমলের পদ্ধতি নিয়ে উস্কানিমূলক বক্তব্য, বিরোধিতা, চ্যালেঞ্জবাজি, বই লেখা এসকল চিন্তা ও কর্মের বিরোধিতা করে। সকলকে এসব পরিহার করার তাগিদ দেয়।
- প্রয়োজন ও কল্যাণকর হলে, শুধু আলিমগণের মাঝে পারস্পরিক ইলমি পর্যালোচনা, মতবিনিময় ও দালীলিক নিকাশ মুনাকাশা হতে পারে। সাধারণ মানুষকে এসব এড়িয়ে যেতে হবে, এবং যার যার অঙ্গনের আহলে হক উলামায়ে কেরামের অনুসরণ করতে হবে।
- প্রত্যেকেই নিজ নিজ মাযহাবের সিদ্ধান্তের উপর সহীহ দালীলগুলো যথাসম্ভব জানার চেষ্টা করবেন এবং তদানুসারে আমল করবেন।
- এক মাযহাবের অনুসারী অন্য মাযহাবের ইমামের পেছনে সালাত আদায় করতে পারবেন, একে অন্যের নিকট ইলম অর্জনের জন্য যাতায়াত করতে পারবেন, যেমনটা পূর্ববর্তী ইমামগনের নিয়মিত আমল ছিলো এবং এখনো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’র মুতাদিল (ন্যায়নিষ্ঠ) অনুসারীগণের মধ্যে দেখা যায়।
- তানজীম কাউকে তার অনুসৃত মাযহাব পরিবর্তনে উৎসাহিত করে না। তবে কারো মধ্যে খাহেশাতের উদ্দেশ্য বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্য না থাকলে তার ইলম বা গবেষণা অনুসারে শরীয়াহ’র উসূল ও নীতিমালার আলোকে নির্দিষ্ট কোনো আমল বা ব্যাপক বিষয়ে মাযহাব পরিবর্তন করলে এটা তার শারঈ ইখতিয়ার হিসাবে তানজীম তাকে নিষেধ করে না।
- মূলতঃ সুন্নাহ বা নফল কিংবা মুস্তাহাব বিষয়ের আমল পর্বে পদ্ধতিগত ভিন্নতা উম্মাহর সদস্যদের জন্য প্রশস্ততা বলে তানজীম মনে করে, যেমনটা সালাফদের অনেকের আলোচনাতে পর্যাপ্ত দৃষ্টান্তসহ উঠে এসেছে।
- তানজীম মনে করে, ছাত্র, অনুসারী ও সাধারণ জনতার নিকট আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের সকল সহীহ মাযহাব সম্পর্কে বিশুদ্ধ ধারণার প্রচার করা উলামায়ে কিরামের দায়িত্ব।
‘জামাআতুল মুজাহিদীন’ কাদেরিয়া, চিশতীয়া, মুজাদ্দেদীয়া এ জাতীয় তরীকার পীর ও অনুসারীদেরকে সাধারণ মুসলিম গণ্য করে। তবে তাদের তরিকাসমূহের মধ্যে থাকা কিছু বিভ্রান্তিকর চিন্তা, বিশ্বাস ও বিদআত সম্পর্কে সকলকে সতর্ক করা প্রয়োজন বলে মনে করে। যেমন:
- তাদের অনেকেই মনে করে, পীর ধরলেই আখিরাতে মুক্তি। পীর আমাদের সব পাপের বোঝা মাফ করিয়ে দেবে। পীর না ধরলে জান্নাত পাওয়া যাবে না…. এসকল বিভ্রান্তিকর আক্বীদাহ।
- তাদের মধ্যে পীরের মর্যাদা নিয়ে অতিরঞ্জন, পীরের প্রতি অতিভক্তি.... এসকল বিষয় অত্যন্ত বিপদজনক।
- প্রত্যেক পীর নিজ অনুসারীদের জন্য নির্দিষ্ট ওযীফা বা আমল ও যিকরের পদ্ধতি বাতলে দেয়, যাকে অনুসারীরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের উপর প্রাধান্য দিয়ে থাকে। জামাআতুল মুজাহিদীন মনে করে এ ধরনের আমল বিদআতের দরজা উন্মুক্ত করার সুযোগ এনে দেয়।
দেওয়ানবাগী বা অনুরূপ কুফরি চিন্তা ও দর্শনের কিছু পীর আছে যাদেরকে শারীয়াহ’র মানদণ্ডে কাফির সাব্যস্ত করা যায়। জামাআতুল মুজাহিদীন এদের বিষয়ে “শারীয়াহ কাউন্সিল” কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনা মেনে চলবে, যারা হকপন্থী উলামায়ে কিরামের সাথে পরামর্শ করে করণীয় ঠিক করবেন। একইভাবে, কবর পূজা, মাযার বানানো, ওরশ মেলা, পীর পূজা ও মাযার কেন্দ্রিক আরো যে সকল শিরক ও বিদআতি আমল আছে জামাআতুল মুজাহিদীন এসকল আমল প্রত্যাখ্যান করে। এসকল অন্যায় সম্পর্কে উম্মাহকে সতর্ক করা প্রয়োজন বলে জ্ঞান করে এবং পরিস্থিতির আলোকে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া সমীচীন মনে করে
জামাআতুল মুজাহিদীন ইসলাম ব্যতীত অন্য দ্বীন বা ধর্মকে কোনো ব্যাখ্যা বা প্রশ্ন কিংবা সংশয় ছাড়াই পূর্ণ বাতিল জ্ঞান করে। ঐ সকল ধর্মে যারা অন্তর্ভুক্ত তাদেরকে কাফির বা মুশরিক বলে বিশ্বাস করে। এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার কালাম অনুসারে এদেরকে সৃষ্টিকূলের নিকৃষ্টতম মনে করে। যেমনঃ ইহুদী, খৃষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, মাজুস… এভাবে আরো যেসকল ধর্ম ও তাদের অনুসারী আছে। তানজীম আরও জ্ঞান করে, জিজিয়া বা বিভিন্ন প্রকার নিরাপত্তা চুক্তির মাধ্যমে ঐ সকল বাতিল ধর্মের অনুসারীরা কেবল তাদের জীবনের নিরাপত্তা পেয়ে থাকে, তাদের মর্যাদায় কোনো পরিবর্তন আসে না। অর্থাৎ, তারা সৃষ্টির অধমই রয়ে যায়। তবে, ইসলামি সমরনীতিতে কাফির মুশরিকদের সাথে শ্রেণীভিত্তিক আচরণগত যে বিভিন্নতার বিষয় তুলে ধরা হয়েছে, জামাআতুল মুজাহিদীনের দৃষ্টিভঙ্গি কোন পর্বেই তার বিপরীত নয়।
বিলাসী জীবনের চিন্তা থেকে কোনো মুমিন মুসলিম আসলী বা হারবী কাফির মুশরিকদের দেশে গমন করবে বা স্থায়ীভাবে বসবাস করবে, এমনটা জামাআতুল মুজাহিদীন বৈধ মনে করে না। তবে আল্লাহর পথে দাওয়াহ ও জিহাদের নিয়তে কিংবা দুনিয়াবি কিছু বৈধ ফায়দা (যেমন ব্যবসা, চিকিৎসা) হাসিলের লক্ষ্যে উপযুক্ত কোনো মুমিন ব্যক্তি সাময়িকভাবে শারঈ শর্তসাপেক্ষে ঐ সকল দেশে যেতে পারবেন।
সুতরাং, উপর্যুক্ত বৈধ কারণ ব্যাতিরেকে অমুসলিমদের দেশে অবস্থান করা মুমিন মুসলিমদেরকে জামাআতুল মুজাহিদীন অপেক্ষাকৃত ভালো মুসলিম দেশ কিংবা নিজ নিজ মুসলিম দেশেই ফিরে আসতে আহবান করে। মুমিনগণ আল্লাহর দেওয়া মর্যাদায় সৃষ্টিকূলের সেরা। অন্যদিকে কাফির মুশরিকরা সৃষ্টিকূলের নিকৃষ্টতম। তাহলে মুমিনগণ কিভাবে কাফির মুশরিকদের অধীন হয়ে বা তাদের সেবা করে জীবন পার করতে পারে? মুমিনদের জন্য এমন কোনো সুযোগ নেই যে, তারা কাফির মুশরিকদের দিকে বা তাদের চিন্তা-কর্ম, জীবন প্রণালী বা কৃষ্টি কালচারের দিকে আকৃষ্ট হবে। এজন্যই আল কুরআন ও হাদীসে এতো কঠোরভাবে কাফির মুশরিকদের দেশ থেকে মুমিন মুসলিমদেরকে হিজরতের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
জামাআতুল মুজাহিদীন আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আক্বীদাহ’র মানদণ্ডে শিয়া ফিরক্বাহ’র মধ্যে যেসব উপদলের বিরুদ্ধে অকাট্যভাবে কুফরুল আকবার সাব্যস্ত হয়েছে এবং মাওয়ানিয়ে তাকফীরের বাধা দূর হয়েছে (রাফেজি, ইসমাইলী,নুসাইরি ইত্যাদি) তাদেরকে কাফির সাব্যস্ত করে। শিয়াদের অন্তর্ভুক্ত বাকীদেরকে আহলুল কিবলা/আহলুল বিদআহ মনে করে। জামাআতুল মুজাহিদীন আহমদিয়া বা কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে কাফির গোষ্ঠী সাব্যস্ত করে। জামাআতুল মুজাহিদীন শিয়া ও কাদিয়ানীদের গোমরাহি বা পথভ্রষ্টতা থেকে বাঁচতে উম্মাহকে সতর্ক করা আবশ্যিক দায়িত্ব গণ্য করে।
জামাআতুল মুজাহিদীন গনতন্ত্র (Democracy), ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ (Secularism), জাতীয়তাবাদ (Nationalism), পুঁজিবাদ(Capitalism), সমাজতন্ত্র (Socialism), সাম্যবাদ(Communism); এসকল অর্থনৈতিক, সামাজিক বা রাজনৈতিক মতবাদকে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক জ্ঞান করে। এসকল মতবাদ ও তা ধারণ করে গড়ে উঠা দল বা রাষ্ট্রব্যবস্থার মূলোৎপাটন করতে জামাআতুল মুজাহিদীন নানামুখী প্রচারণা ও অন্যান্য কর্ম পদক্ষেপ গ্রহণ করে। জামাআতুল মুজাহিদীন তাদের সম্পর্কে সকলকে সচেতন করে এবং তাদের বিরোধিতা করতে মানুষকে উৎসাহিত করে। এই সকল মতবাদের মূল ধারক-বাহকদেরকে জামাআতুল মুজাহিদীন কাফির সাব্যস্ত করে। একই সাথে জামাআতুল মুজাহিদীন মানব রচিত সকল আইন প্রত্যাখ্যান করে। এ আইনের রচয়িতা, প্রয়োগকারী, বিচারক, উকীল ও সন্তুষ্টচিত্তে যারা এ আইনে বিচারপ্রার্থী এবং এ আইনের যারা রক্ষণাবেক্ষণকারী; সকলকে কাফির বা মুনাফিক গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত মনে করে। তবে নির্দিষ্ট করে সকলকে কাফির জ্ঞান করে না।
ধর্ম নিরপেক্ষ বা গণতান্ত্রিক দলগুলোর নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদেরকে জামাআতুল মুজাহিদীন কাফির বা মুরতাদ সাব্যস্ত করে। তবে সাধারণ ভোটার ও সমর্থক; যারা অজ্ঞতা বা দুনিয়াবি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার জন্য উক্ত দলগুলোর সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে, জামাআতুল মুজাহিদীন তাদেরকে তাকফীর করে না। তবে তাদের এমন সম্পৃক্ততা যে শিরক, কুফর বা পাপ কাজ; এটা তাদেরকে বুঝানোর জন্য নানামুখী দাওয়াত ও প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে চেষ্টা চালায়।
ধর্মনিরপেক্ষ-ধর্মহীন সরকারের প্রতিরক্ষার কাজে নিয়োজিত সশস্ত্র বাহিনী বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদেরকে তানজীম সাধারণভাবে আহলুর রিদ্দাহ’র (মুরতাদ গোষ্ঠীর) অন্তর্ভুক্ত মনে করে। তবে সবাইকে নির্দিষ্ট করে তাকফির করে না। তানজীম এই সকল বহিনীতে চাকুরি করতে নিষেধ করে। সকলকে এই সকল বাহিনীর চাকুরি ছেড়ে ইমান ও জীবনের নিরাপত্তা নিতে বলে। তানজীম সাধারণ মুসলিমদেরকে আহ্বান করে, যেন এই সকল বাহিনীর সাথে বারাআতের সম্পর্ক বজায় রাখে, কেননা তারা আল্লাহর শত্রুদের অন্তর্ভুক্ত। এই শাসকদের প্রশাসনিক বিভিন্ন স্তরে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের কিছু নির্দিষ্ট শ্রেনীকেও জামাআতুল মুজাহিদীন সাধারণ ভাবে আহলুর রিদ্দাহ তথা মুরতাদ গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত জ্ঞান করে। যদিও এই স্তরগুলোর অনেকগুলো রিদ্দাহ এর অন্তর্ভুক্ত নয়।
জামাআতুল মুজাহিদীন ইসলামি গণতন্ত্রের কোনো অস্তিত্ব স্বীকার করে না। এমনকি ‘ইসলামি গণতন্ত্র’ পরিভাষাটিরও ব্যবহার বৈধ জ্ঞান করে না। তবে,
- যেসব ইসলামি সংগঠন বা দল গণতন্ত্র বা অন্য কোন মতবাদের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠার দাবি করে মিছিল, হরতাল, ধর্মঘট, সংসদীয় নির্বাচন বা অন্যান্য প্রচলিত নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন কর্মসূচির বাস্তবায়ন করে এবং পার্লামেন্টে অংশগ্রহণ করে তানজীম তাদেরকে তাকফীর করে না।
- জামাআতুল মুজাহিদীন তাদের এরূপ দাবী ও কর্মসূচিকে অন্যায়-অসার ও দ্বীন বিরোধী মনে করে। জামাআতুল মুজাহিদীন এ সকল কর্ম থেকে সকলকে দূরে থাকার আহ্বান জানায় ও এগুলোর কুফল সম্পর্কে সকলকে সতর্ক করে।
তানজীম মনে করে ‘ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান’ আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠায় চেষ্টারত এবং দীর্ঘ সময় যাবৎ সফলভাবে জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ’র কাজ আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছে, আলহামদুলিল্লাহ। এই ইসলামি ইমারাত বিশ্বের অনেক মুসলিম-মুজাহিদের তালীম-তাদরীব-তারবিয়াহ ও আশ্রয়স্থল হিসেবে সুপরিচিত। এটাই কয়েক দশক যাবৎ মুজাহিদদের কেন্দ্রীয় ভূমি হিসেবে বিবেচিত। সুতরাং এর প্রতিরক্ষার কাজ আমাদের মূল দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান যতক্ষণ কুরআন-সুন্নাহ এবং সালাফদের আক্বীদাহ ও মানহাজের উপর অটল থাকবে জামাআতুল মুজাহিদীন তার সমর্থন ও সহযোগিতা করেই যাবে এবং ভারত, বাংলাদেশ ও বার্মায় এর শত্রুদেরকে শায়েস্তা করার মাধ্যমে সাধ্যমতো প্রতিরক্ষার কাজ চালিয়ে যেতে সচেষ্ট থাকবে। আর জামাআতুল মুজাহিদীন আল্লাহর নিকট তাদের জন্য ঐ অবিচলতার দুআই করতে থাকবে, ইনশাআল্লাহ।
- পূর্ব থেকে স্বাভাবিকভাবে বা অনিবার্যভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যে কোন হকপন্থী জামাআহ/ তানজীমকে জামাআতুল মুজাহিদীন সমর্থন করে এবং তাদের সাথে সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্বীনি আমল সম্পাদনে সচেষ্ট হয় ও ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি মনে করে। তবে বাস্তব অবস্থা, অক্ষমতা, নানাবিধ সমস্যা এ ক্ষেত্রে অন্তরায় হওয়ায় তা দূর করতে তানজীম সচেষ্ট।
- যথাযথ শারঈ কারণ ছাড়া সঠিক আক্বীদাহ ও মানহাজের উপর প্রতিষ্ঠিত কোন তানজীমে ঐক্যবদ্ধ মুমিন-মুজাহিদদের মাঝে বিভেদ-বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করা কিংবা পূর্বের সঠিক আক্বীদাহ ও মানহাজের উপর প্রতিষ্ঠিত তানজীম ভেঙ্গে নতুন নেতৃত্ব-দল-তানজীম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করাকে তানজীম সমর্থন করে না বরং বিচ্ছিন্ন হওয়া সেসব মুমিন-মুজাহিদকে পারস্পরিক নাসীহাহ-ইসলাহ’র মাধ্যমে পূর্বোক্ত তানজীমে ঐক্যবদ্ধ থাকতে আহ্বান জানায়। যাতে মুমিনদের মাঝে বিভেদ-বিচ্ছিন্নতা বৃদ্ধি না পায় এবং সকলেই ঐক্যের দিকে ধাবিত হয়। এক তানজীম ভেঙ্গে নতুন তানজীম নয় বরং পূর্ব থেকে বিদ্যমান তানজীমগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি।
- জামাআতুল মুজাহিদীন পৃথিবীর অন্যান্য সহীহ ও অভিজ্ঞ তানজীম, প্রবীণ-অভিজ্ঞ মুজাহিদগণকে শারঈ নীতির আলোকে অনুসরণীয় মনে করে এবং তাদের থেকে সহীহ দ্বীনি ও জিহাদি অনুপ্রেরণা লাভ করে।
- জামাআতুল মুজাহিদীন মনে করে, পৃথিবীর সকল মুমিন মুসলিমের সাথেই সদাচরণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য সচেষ্ট থাকা জরুরি, যেভাবে শারীয়াহ নির্দেশনা দেয়। সুতরাং, জিহাদ-ক্বিতালের আমলে লেগে থাকা তানজীমগুলো ছাড়াও যে সকল ইসলামি তানজীম আছে, তাদের সাথে জামাআতুল মুজাহিদীন সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করে।
- এই সকল ইসলামি তানজীম যেহেতু মানুষের মধ্যে দাওয়াত ও ইসলাহের কাজ করে তাই জামাআতুল মুজাহিদীন তাদেরকে দ্বীন প্রতিষ্ঠায় নিজেদের অংশ বা ভ্রাতৃসংগঠন বিবেচনা করে।
- জামাআতুল মুজাহিদীন তাদের সকল ভালো কাজের জন্য প্রশংসা করে ও সামর্থ্যের আলোকে তাদের সেই মারুফ কাজে পরস্পর সহযোগিতার প্রচেষ্টা চালায়। কোন ভুল কাজ পরিলক্ষিত হলে যথাযথ শারঈ পন্থায় তাদেরকে ইসলাহ করে।
- তাদেরকে বরকতময় জিহাদে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান করে, যাতে শারীয়াতে মুহাম্মাদি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতিষ্ঠায় তারাও কার্যকর সহযোগী হতে পারেন।
জামাআতুল মুজাহিদীন ইলমকে কোন নির্দিষ্ট শ্রেণী বা নির্দিষ্ট ধারায় পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ করে না। বরং, আরাবী, খোরাসানী, দেওবন্দি এসকল ধারায় পরিচালিত প্রকৃত ইলম চর্চা কেন্দ্র বা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরস্পরের সহযোগী মনে করে এবং সকলকে যথাযথ সম্মানের স্থানে রাখতে সচেষ্ট। জামাআতুল মুজাহিদীন আরো মনে করে,
প্রাতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেটই কেবল একজন ব্যক্তির আলিম হওয়ার মানদণ্ড নয়। কোনো ব্যক্তির নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে অর্জিত সার্টিফিকেট না থাকলেও সে ব্যক্তিগত অধ্যয়ন, গবেষণা ও প্রকৃত কোন আলিমের তত্ত্বাবধানে অর্জিত ইলমের যাচাই, চর্চা এবং ইলমের রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে আলিমে দীনে পরিণত হতে পারে। তানজীম প্রত্যেককে তার স্ব-স্ব অবস্থান এবং স্তর অনুযায়ী ইলম অর্জনে উৎসাহিত ও সহযোগিতা করে এবং এজন্য যথাসাধ্য ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ গ্রহন করতে সচেষ্ট। আক্বীদাহ-মানহাজ ও আহকাম সংক্রান্ত আলোচনা বা গবেষণাতে তানজীম উৎসাহিত করে। উম্মাহকে এসকল বিষয়ে সুশিক্ষিত ও সচেতন করার উপর তানজীম বিশেষ গুরুত্ব দেয়।
হাদীসে রসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলোকে স্বভাবতই উলামাদেরকে আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামদের ‘ওয়ারিস’ জ্ঞান করে। তাই তানজীম এই অঞ্চলে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য উলামা ও তাদের দ্বীনি প্রতিষ্ঠানগুলোকে অন্যতম চালিকা শক্তি ও একেকটি দুর্গ মনে করে। তাই তাদের ব্যাপারে তানজীমের পদক্ষেপসমূহ:
- আকাশের নক্ষত্ররাজির মধ্যে যেমন চাঁদের প্রাধান্য রয়েছে তেমনি সাধারণ মানুষের উপর আলিমের মর্যাদা রয়েছে। তাই তানজীম তাদের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করা অন্যতম দায়িত্ব মনে করে।
- “তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ ও তার রসুলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমর” (আলিম, নেতা, কর্তৃত্বশীল) কাজেই আলিম-উলামাদেরকে তানজীম ইসলামি সমাজের নেতা মনে করে এবং শারীয়াহ নির্দেশিত পন্থায় তাদের যথাযথ আনুগত্য ও তাদের নির্দেশনা বাস্তবায়নের উপায় অন্বেষণ করে।
- “আল্লাহ তায়ালা বলেন, ... فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ …অতএব যদি তোমরা না জানো, তবে জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস করো” (আন নাহলঃ ৪৩)। সুতরাং আলিমরা হচ্ছেন দীনের শিক্ষক। আলিমগণের সাহচর্যে থেকে তাদের কাছ থেকে দ্বীন শিক্ষা এবং যাবতীয় বিষয়ে শারঈ সমাধান গ্রহণ করাকে তানজীম শরঈ দায়িত্ব মনে করে এবং এর প্রতি সকলকে উৎসাহিত করে।
- দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাফেলায় উম্মাহর মুজাহিদীনদের পরিচালনার জন্য নেতৃত্বের ভার গ্রহণে উলামাদের সামনে আসার জন্য তানজীম উদাত্ত আহ্বান জানায়।
উলামায়ে সূ' তথা মুরতাদ সরকারের তাবেদার দরবারি আলিম ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির স্রোতে গা ভাসানো মডারেট আলিম, যারা দুনিয়ার তুচ্ছ ভোগ বিলাসিতার বিনিময়ে তাদের দ্বীন ও ইলমকে বিক্রি করে দিয়েছে, কুরআন–সুন্নাহ ও সালাফদের অনুসৃত পন্থায় দালীল আদিল্লাহর ভিত্তিতে উম্মাহর সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচন করে দেওয়া তানজীম দায়িত্ব মনে করে। সেই সাথে দ্বীন কায়েমের কাফেলার বিরুদ্ধে তাদের প্রত্যেক বিভ্রান্তিকর ফতোয়ার জবাব সঠিক ইলমের মাধ্যমে দেওয়াটাই যথেষ্ট মনে করে। অর্থাৎ,এ পর্বে তাদের সংশয়পূর্ণ ইলমের জবাব সহীহ ইলম দ্বারা মোকাবেলা করাই জামাআতুল মুজাহিদীনের নীতি।
জামাআতুল মুজাহিদীন প্রচলিত জড়বাদী, ও ধর্মহীন শিক্ষা ব্যবস্হাকে অনেক ক্ষেত্রে হারাম মনে করে। কেননা, এই শিক্ষা মানুষকে আল্লাহর সাথে ক্রমান্বয়ে সম্পর্কহীন করে দেয়। এই শিক্ষা মানুষকে আল্লাহর দাসত্বের পরিবর্তে আল্লাহর অবাধ্যতা শেখায় এবং নিজ প্রবৃত্তির দাসত্বের পথ ধরিয়ে দেয়। জামাআতুল মুজাহিদীন এই শিক্ষার সার্টিফিকেটকে মূল্যায়ণ করে না। সকলকে দ্বীনি শিক্ষার সাথে লেগে থাকতে নির্দেশনা দেয়। তবে এই শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে দীনের সাথে সাংঘর্ষিক নয় এমন অংশ থেকে উপকার নেওয়া তানজীম বৈধ জ্ঞান করে। যেমনঃ বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং, চিকিৎসা বিদ্যা, নির্মাণ শিল্প বিষয়ক শিক্ষা, ভাষা শিক্ষা ইত্যাদি থেকে উপকার নেওয়া যেতে পারে।
জামাআতুল মুজাহিদীন “আল ওয়ালা ওয়াল বারাআর” উপর সালফে সালেহীনের ধারায় সঠিক অবস্থা ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর। কাফির, মুশরিক, মুরতাদ ও মুনাফিকদের সাথে কোনো ওলায়াতকে (বন্ধুত্ব) এই তানজীম সমর্থন করে না, যদিও তারা আত্মীয় হোক না কেন। অন্যদিকে এইক্ষেত্রে খারেজীদের মতো বাড়াবাড়িকে জামাআতুল মুজাহিদীন প্রশ্রয় দেয় না। তবে ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য কাফির মুশরিক মুরতাদ মুনাফিকদের সাথে মৌখিক নমনীয়তা এই তানজীম সমর্থন করে, যখন অন্তরে তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতা বজায় থাকে। একইভাবে অর্থ সম্পদের বিনিময়ে তাদের দ্বারা বৈধ কোনো ফায়দা হাছিলের চেষ্টায় জামাআতুল মুজাহিদীন দোষ দেখে না। একইসাথে জামাআতুল মুজাহিদীন “আল ওয়ালা ওয়াল বারাআ” এর মানদণ্ড সামনে রেখেই অন্যান্য দল-মতের ব্যাপারে নিজেদের কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করে।
- জামাআতুল মুজাহিদীন শারীয়াহ’র সীমারেখা মেনে চলার ব্যাপারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং শারীয়াহ’র সীমালঙ্ঘন করা থেকে নিরাপদ থাকতে চায়। তানজীমের সকল সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রম ইসলামি শারীয়াহ’র মানদণ্ডে স্থির করার চেষ্টা করা হয়। কর্ম বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াতেও শারীয়াহ’র নির্দেশনা ও সীমারেখা মেনে চলতে তানজীম প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সহীহ আক্বীদাহ ও আহকাম আশ শারীয়াহ’র মৌলিক বিষয়ে তানজীম কোন প্রকার আপস করে না।
- সেইসাথে, জামাআতুল মুজাহিদীন আল কুরআন ও সুন্নাহ’র উপর প্রতিষ্ঠিত আহকামুশ শারীয়াহ পরিপন্থী সকল আইন, বিধান, আদেশ, নিয়ম, নীতি, নির্দেশনা, বক্তব্য ইত্যাদি বর্জনীয় ও বাতিল বলে গণ্য করে। তানজীম এই নীতি সকল ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে এবং করবে ইনশাআল্লাহ।
- তানজীম কোন প্রয়োজন, লাভ-ক্ষতি বা সমস্যাকে আহকামুশ শারীয়াহ’র উপর প্রাধান্য দেয় না। বরং সকল ক্ষেত্রে বিবেচনার মূলে থাকে আহকামুশ শারীয়াহ’র প্রাধান্য। এরপর শারীয়াহর নির্দেশনার আলোকে কোন প্রয়োজন, লাভ-ক্ষতি, সমস্যা ইত্যাদি বিবেচনা করে। তানজীম এ নীতি সকলের কাছে উপস্থাপন করে এবং এর প্রতি উৎসাহিত করে।
জামাআতুল মুজাহিদীন তার যে কোনো পর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে মূলনীতি, শাখা মূলনীতি, সমরনীতি ও আনুষঙ্গিক নীতিমালা সামনে রাখে। তবে এই সকল নীতির কোন অনুচ্ছেদ বা ধারা কিংবা লাইন যদি কখনো শারীয়াহ’র মানদণ্ডে যাচাই পূর্বক ভুল প্রমাণিত হয়, কিংবা কোন ভুল বা অন্যায়ের বিপরীতে কারো কাছ থেকে শারঈ সংশোধনী পাওয়া যায় তবে তা সাথে সাথে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করে ঐ ভুল অংশটুকুতে প্রয়োজনীয় সংশোধনের ব্যবস্থা করা হবে।
জামাআতুল মুজাহিদীন তার যে কোনো তানজীমি সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্বে উপযুক্ত ব্যক্তি বা পরিষদের সাথে প্রয়োজনীয় পরামর্শ করে থাকে। এই সকল পরামর্শ ও নাসীহাহকে মূল্যায়ণের চেষ্টা করে। অতএব যে কোনো পর্যায়ের মুমিন, মুজাহিদ বা কোন তানজীমের পক্ষ থেকে নাসীহাহ, ইসলাহ ও গঠনমূলক সমালোচনাকে তানজীম স্বাগত জানায়। তবে তা যত্রতত্র প্রচারিত না হয়ে তানজীমি কর্তৃপক্ষের কাছে আলোচিত ও প্রচারিত হওয়া উচিত বলে মনে করে।
ধারা.১
তানজিম খিলাফা বা ইমারাহ (রাস্ট্র) নয়। বরং খিলাফাহ বা ইমারাহ পুন প্রতিষ্ঠার লক্ষে সংঘবদ্ধ, সুশৃঙ্খল প্রতিষ্ঠান মাত্র। এই তানজীম বা অন্য কারো দ্বারা এই অঞ্চলে ইসলামি ইমারাহ প্রতিষ্ঠিত হলে এখানকার সকলেই তা মেনে নেবেন। তখন এখানে আর তানজীমের প্রয়োজন হবে না। খিলাফাহর বাইয়াতের মত তানজীমে বিশেষ কোন বাইয়াত নেই। তবে খিলাফাহ/ ইমারাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তানজীমের সাথে কাজ করার বা জিহাদ ও আনুগত্যে শরীক থাকার অঙ্গীকার বা ওয়াদা করার নামই শাব্দিক অর্থে এখানে বাইয়াত বুঝানো হয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জিত হওয়া পর্যন্ত এই বাইয়াতের ধারাবাহিকতা বলবৎ থাকবে। সে পর্যন্ত এই বাইয়াত যথাযথ পালন করতে হবে。
ধারা.২
জামাআতুল মুজাহিদীনে অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রাথমিক যোগ্যতা হলো, মুমিন ও মুসলিম হওয়া। এরপর নির্ধারিত স্বাক্ষাৎকার ও যাচাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দাওয়াতুল ফারদিয়াহ অনুসরণ করে যে কোন মুমিন জামা‘আতুল মুজাহিদীন’র অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন।
ধারা.৩
তানজীমের বিভিন্ন স্তর এবং এজন্যে নির্ধারিত শর্ত ও যোগ্যতা আছে। এগুলো পূরণ ও অর্জন করে যেমন কেউ কোন স্তরে উঠতে পারেন তেমনি কোন স্তরে উঠার পর নির্ধারিত শর্ত ও যোগ্যতার অনুপস্থিতি বা এর বিপরীত কর্মকাণ্ডের কারণে কেউ তার স্তর থেকে নিচে নেমে যেতে পারেন। নির্ধারিত শর্ত ও যোগ্যতার ভিত্তিতে তানজীমি কর্তৃপক্ষ নিয়মিত (নির্দিষ্ট সময়ে) সকলের স্তর-মান পুনর্বিবেচনা করবেন, যাতে সর্বদা যোগ্য ব্যক্তিগণই তানজীমের স্তরসমূহে বিদ্যমান থাকেন। কারো স্তর পুনর্বিবেচনা বা সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগে কর্তৃপক্ষ উক্ত সদস্যকে সংশোধিত হওয়ার জন্য যৌক্তিক সময় দিবেন ও সহযোগিতা করবেন।
ধারা.৪
শারীয়াহ অনুমোদিত কারণ ও যথাযথ নিয়ম অনুসরণ ব্যতীত (পরবর্তী ধারা দ্রষ্টব্য) নিছক ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ, সাময়িক লাভ-ক্ষতি, স্বার্থহানী, সফলতা-ব্যর্থতা কিংবা অন্য তানজীমের হঠাৎ অগ্রগতির কারণে সেই তানজীমের প্রতি আকর্ষণ, ইত্যাদি তানজীম পরিত্যাগের সঠিক কারণ নয়। বরং তানজীম স্বীয় আদর্শ ও সঠিক পথ বর্জন করলেই (মাআযাল্লাহ, আল্লাহ আমাদেরকে সকল অন্যায় থেকে হেফাজত করুন) কেবল তানজীম পরিত্যাগ করা উচিত। হ্যাঁ, সাময়িক কোন ভুল দেখলে তা সংশোধন করতে হবে। কারণ মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। অন্যায়ের সাথে কোন আপস চলবে না।
ধারা.৫
গ্রহণযোগ্য শারঈ কারণ ছাড়া কোন বিশেষ প্রয়োজনে তানজীম ছাড়তে হলে তানজীমের যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পূর্বে প্রদত্ত কোন আমানত, লেন-দেন, হিসাব, চুক্তি ইত্যাদির নিষ্পত্তি পূর্বক বাইয়াহ থেকে দায়মুক্তি নিতে হবে। এরূপ দায় মুক্তি ছাড়া তানজীম পরিত্যাগ করলে তার উপর শারঈ দায়বদ্ধতা বহাল থাকবে। উক্ত শারঈ দায়বদ্ধতার কারণে তানজীমের এই পাওনা তাকে পূরণ করতেই হবে। তার বিরুদ্ধে তানজীম কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলেও মুমিন হিসেবে তার উপর ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ আচরণ করবে এবং আল্লাহর ভয় প্রদর্শনের মাধ্যমে আমানত আদায় করার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। সে তা আদায় করতে অস্বীকার করলে বা উদাসীনতা দেখাতে থাকলে মুমিনদের নিকট তার এহেন কর্মকাণ্ড প্রকাশ করে দিয়ে তার ব্যাপারে সকল মুমিনকে সচেতন করা উচিত বলে তানজীম মনে করে। যাতে অন্য তানজীম বা মুমিনগণ তার দ্বারা প্রতারিত না হয়। এক তানজীম থেকে অন্য তানজীমে যেতে চাইলেও তাকে এ শারঈ নীতি ও বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করতে হবে।
ধারা.১
তানজীমের “শারীয়াহ কাউন্সিল” তানজীম সংশ্লিষ্ট যে কোন বিষয়ে আমাদের মূলনীতির আলোকে দালীল আদিল্লাহ উপস্থাপন করেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। প্রয়োজনে যে কেউ কোনো বিষয়ের দালীল জানতে চাওয়ার অধিকার রাখেন। সুতরাং, তানজীমের অন্তর্ভুক্ত সকলকে সাংগঠনিক বিষয়ে “শারীয়াহ কাউন্সিলের” দালীল ভিত্তিক সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে। কিন্তু তানজীমের অন্তর্ভুক্ত সকলেই তানজীমি বিষয়ের বাইরে অন্যান্য ব্যক্তিগত আমল-ইবাদাত ইত্যাদি বিষয়ে যেকোন হকপন্থী ও দালীল নির্ভর মাযহাব, ইমাম, আলিমের যথাযথ অনুসরণ করতে পারবেন। এতে সকলের শারঈ পন্থায় নিয়ম মাফিক এখতিয়ার আছে বলে তানজীম মনে করে।
ধারা.২
তানজীম কারো ব্যক্তিগত বা তানজীম বর্হিভূত বিষয়াদি নিয়ন্ত্রণ বা পরিচালনা করে না, কারো শারীয়াহ অনুমোদিত স্বাধীনতায় তানজীম হস্তক্ষেপ করে না। তবে সকল বিষয়ে শারঈ নির্দেশনা মেনে চলতে তানজীম সকলকে নির্দেশ ও উপদেশ দেয়। ইলম-দালীলহীন নিজ ইচ্ছা-অনিচ্ছা ও প্রবৃত্তির অনুসরণ করতে তানজীম ষ্পষ্টভাবে নিষেধ করে।
ধারা.৩
তানজীমের অন্তর্ভুক্ত কারো ব্যক্তিগত বা সামাজিক ব্যবসা বানিজ্য, লেনদেন, চাকুরি, অন্যান্য উপার্জন পদ্ধতি, বিবাহ, পরিবার পরিচালনা, লেখাপড়া ও অন্যান্য মুআমালাত-মুআশারাত ইত্যাদি বিষয়ে তানজীম ইসলামি শারীয়াহ’র বিধি-নিষেধের আলোকে এবং সার্বিক ‘উপকার-অপকার’ এর মূলনীতি অনুসরণ করে ইলম, নাসীহাহ, সংশোধনী ও তাগিদ দিয়ে যাবে। কারো মধ্যে হালাল গ্রহণে স্বতঃস্ফূর্ততার অভাব কিংবা হারাম ও অন্যায় বর্জনে উদাসীনতার ভাব পরিলক্ষিত হলে তানজীম নিজেকে হারাম থেকে নিরাপদ রাখবে এবং সতর্কতার সাথে তার বিষয়ে মানোন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।
ধারা.১
সদস্যগণের উপর তানজীমের প্রতি বিশেষ দায়িত্ব-কর্তব্য বর্তায়, যেসব দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের জন্য তারা (স্বেচ্ছায়) তানজীমের অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। তানজীমের সকল দায়িত্বশীল ও কর্মীকে তানজীমের সকল নিয়ম-শৃঙ্খলা যথাযথ মেনে চলতে হবে। তানজীমি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে (তানজীম সংক্রান্ত) যে কাজ বা দায়িত্ব তাকে দেওয়া হবে, তিনি তা মানতে বাধ্য থাকবেন। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে প্রাধান্য দেওয়া যাবে না। বরং দ্বীন ও তানজীমের ন্যায়নিষ্ঠ স্বার্থকেই প্রাধান্য দিতে হবে এবং তা শারীয়াহ’র শর্ত মোতাবেকই পালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, কেউ দায়িত্বশীল হিসেবে তানজীমের অন্তর্ভুক্ত হন না বরং সাধারণ কর্মী-সদস্য হিসেবে তানজীমের অন্তর্ভুক্ত হন। পরবর্তীকালে যোগ্যতায় উত্তীর্ণ হয়ে যে কোনো পর্যায়ে দায়িত্বশীল হিসেবে মনোনীত হতে পারেন।
ধারা.২
আমীর ও দায়িত্বশীলগণ কখনোই আল কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ পরিপন্থী বা শারীয়াহ বিরোধী কোন আদেশ-নিষেধ-অনুরোধ করতে পারবেন না এবং এরূপ বিষয়ের অনুমতি দিতে পারবেন না। এরূপ কেউ দিয়ে ফেললে তা কেউ মানবেন না বরং যথাযথ শারঈ নিয়মে তাকে সংশোধনী দিবেন। কর্মী ও সদস্যদের যথেষ্ট সচেতন হতে হবে। তানজীম এ ব্যাপারেও সকলকে সতর্ক করে।
ধারা.৩
স্থান-কাল-পাত্রের ভিন্নতায় একজন আমীর ও মামুর কখনো একে অন্যের স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন। তানজীমি কর্তৃপক্ষের সূত্রে যে বিষয়ে যখন যাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে কিংবা কোনো পরিসরে দায়িত্বশীল মনোনীত করা হবে তখন উক্ত বিষয়ে বা পরিসরে সংশ্লিষ্ট সকলেই তাকে মেনে চলবেন, যদিও এক্ষেত্রে মামুরদের কেউ অন্যত্র বা অন্য ক্ষেত্রে বর্তমান মুহূর্তের আমীরের চেয়ে ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীল হয়ে থাকেন। অর্থাৎ অন্য বিষয়ে তিনি দায়িত্বশীল হলেও বর্তমান বিষয় বা পরিসরে তিনি দায়িত্বশীল নন বরং এ ক্ষেত্রে তিনি একজন মামুর।
ধারা.৪
আমীর ও দায়িত্বশীলগণ নিজ দায়িত্বের ব্যাপারে তানজীমের যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবেন। তানজীমি সকল ব্যাপারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দায়িত্ব তানজীমের। এতে সকলেই সহযোগিতা করবেন। তবে যাকে যে দায়িত্ব-কাজ দেওয়া হয়নি তাকে সে বিষয়ে জবাবদিহি করা যাবে না। তিনি নিজেও জবাবদিহির দায় নিবেন না। সকল ব্যাপারে স্বচ্ছতার মতই অর্থনৈতিক হিসাবেও স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে। কোন ভাবেই এ ব্যাপারে শিথিলতা প্রদর্শন, আমানাতের খিয়ানাত ও বে-ইনসাফী করা যাবে না।
ধারা.৫
আমীর ও মামুরদের সম্পর্ক হতে হবে আন্তরিক ও স্বচ্ছ। তানজীমি বিষয়ে শারীয়াহ অনুযায়ী আমীর ও দায়িত্বশীলগণের যথাযথ আনুগত্য করতে হবে। শারীয়াহ অনুযায়ী প্রত্যেকে যতটুকু সম্মান পাওয়ার অধিকার রাখেন, তাকে ততটুকু সম্মান করতে হবে। শারীয়াহ বহির্ভূত অতিভক্তি বর্জন করতে হবে, কারণ তা অন্ধ অনুসরণ ও অন্যায় আনুগত্য করতে উৎসাহিত করে। স্রষ্টার অবাধ্যতায় সৃষ্টির আনুগত্য করা যাবে না। অন্ধ আনুগত্য ও ভক্তি-শ্রদ্ধায় অতিরঞ্জন বর্জনীয়।
ধারা.১
"সৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে মুমিনগণ একে অন্যের সহযোগিতা করবে, কিন্তু পাপ ও সীমালঙ্ঘনে কোন প্রকার সহযোগিতা নয়"; পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই মহান নীতি কার্যকরে তানজীম সচেষ্ট। বিশুদ্ধ আক্বীদাহ ও শারীয়াহর মানদণ্ডে উত্তীর্ণ যে কোনো তানজীমের সৎকর্মে জামাআতুল মুজাহিদীন সাংগঠনিকভাবে, সাধ্যানুসারে ও চাহিদার সাথে মিল রেখে সমর্থন ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। উল্লেখ্য যে, এই সহযোগিতা হবে সংগঠন থেকে সংগঠন। কোনো সদস্যের একক বা বিচ্ছিন্ন চিন্তা থেকে নয়।
ধারা.২
সকল সহীহ তানজীমের সাথে সুসম্পর্ক ও ভালো কাজে সমন্বয় আনয়নের লক্ষ্যে জামাআতুল মুজাহিদীনের শীর্ষ পর্যায়ে বিশেষ “সমন্বয়ক পরিষদ” রয়েছে, যারা অন্য তানজীমের সাথে প্রয়োজনানুসারে যোগাযোগ করবে।
ধারা.৩
জামাআতুল মুজাহিদীনের কোন দায়িত্বশীল বা সাধারণ কোনো সদস্যও একই সাথে অন্য কোনো তানজীমের সাংগঠনিক আনুগত্য করতে পারবেন না। তবে অন্য তানজীমের কারো ব্যক্তিগত বা পারিবারিক বা ব্যবসা ইত্যাদি পর্বে ভালো কাজে সহায়তা করতে পারবেন। সার্বিক বিবেচনায় এই নীতিটি অধিকতর সঠিক ও উপকারী।
ধারা.১
তানজীম কারো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না এবং তানজীমভুক্ত যে কারো অন্যায়, অবিচার ও বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে শারীয়াহ অনুমোদিত ও নির্দেশিত পন্হায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে তানজীম প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সকলকে অন্যায় থেকে বিরত রাখতে তানজীম চেষ্টা করে। অধীনস্থদের বিচার ও শাস্তির ব্যবস্থা করে। এগুলো মূলত ছোট, দৃষ্টান্ত ও শিক্ষামূলক শাস্তি, যা তা‘যীরের অর্ন্তভুক্ত।
ধারা.২
তানজীম শারীয়াহ নির্ধারিত অপরাধের শাস্তি (অন্যায়ভাবে হত্যা, বিবাহিত হয়ে ব্যাভিচার, ঈমানের পর স্পষ্ট কুফরীর মাধ্যমে দ্বীন পরিবর্তন করে মুরতাদ হয়ে যাওয়া বা মুসলিম শাসক ও মুসলিম ভূখণ্ডের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করা) ব্যতীত কোন মুমিনকে হত্যা করা বৈধ মনে করে না। তবে এসব অপরাধ সমূহ শারঈ আদালত কর্তৃক বিচার্য ও শারঈ শর্ত ও নিয়ম অনুযায়ী প্রযোজ্য। এছাড়া অন্য কেউ তা করার এখতিয়ার রাখে না।
ধারা.৩
তানজীমের সদস্যগণ অধিক পরিমাণ ইস্তেগফার ও তাওবার দ্বারা নিজেদেরকে দৈনন্দিন জানা-অজানা, ইচ্ছা-অনিচ্ছায় ঘটে যাওয়া পাপ থেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করবে এবং যে সকল পাপের বিপরীতে নির্দিষ্ট কাফফারা আদায়ের বিষয় রয়েছে তা বাস্তবায়ন করবে। নিজেদের দ্বারা কোন বান্দা কিংবা সৃষ্টির হক্ব নষ্ট হয়ে গেলে তানজীম তার পরিমাপের আলোকে ক্ষমা, আপস কিংবা ক্ষতিপূরণের ইসলামি বিধানানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
নারীগণ তানজীমের কর্মে অন্যতম সহযোগী। তবে তানজীমের আলাদা কোন নারী শাখা নেই। প্রত্যেক মুসলিম নারী তার অবস্থানুসারে বাবা,ভাই,স্বামী,সন্তান এদের কারো সহায়তায় তানজীমের বিভিন্ন কর্মে নিজের মেধা ও শ্রম ব্যয় করবেন। নারীগণ স্বামীর কাজে সহায়তা ও তার আনুগত্যের মধ্য দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে এগিয়ে যাওয়া, সন্তান পালনের মধ্য দিয়ে উম্মাহ’র জন্য ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরী, গৃহে ইলমী প্রোগ্রাম, ইলমী গবেষণা, লেখনী তৈরী, গার্হস্থ্য অর্থ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন দিক বাস্তবায়ন ইত্যাদি নিয়ে কাজ করবে। তাদের গবেষণা, কর্ম ও সহায়তা চেইন অব কমান্ড সূত্রে কেন্দ্রীয়ভাবে মূল্যায়িত হবে।
- জনসমাজে আল কুরআনের ইলম ও নির্দেশনা সঠিকভাবে বিতরণ এবং উপস্থাপন।
- মানুষের অন্তরে আল্লাহর ভয় জাগ্রত করা এবং ইমান, তাক্বওয়া ও হিকমাহ ভিত্তিক ব্যক্তিত্বের উন্নয়ন ঘটানো।
- আল্লাহর হক্ব সম্পর্কে মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি করা ও আল্লাহর হক্ব আদায়ে সহযোগিতা করা।
- মানুষের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত মৌলিক অধিকারগুলো কী তা সকলের নিকট তুলে ধরা এবং উক্ত অধিকার ফিরে পাওয়ার চেষ্টায় সহযোগিতা করা।
- সমাজ জীবনে একে অন্যের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত অধিকার সম্পর্কে জানা ও তার বাস্তবায়নে সকলকে সহযোগিতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধের পুনর্জাগরণে অধিক গুরুত্বারোপ।
- সকলের মাঝে সততা, বিশ্বস্ততা ও আমানতদারিতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালানো।
- নারীর জন্য আল্লাহ প্রদত্ত অধিকার সম্পর্কে সকলকে ধারণা দেওয়া এবং উক্ত অধিকার প্রতিষ্ঠায় সকলকে সহযোগিতা করা।
- বেকারত্ব ও ভিক্ষাবৃত্তি দূরীকরণে "নিজ হাতে হালাল উপার্জন" কর্মসূচি বাস্তবায়ন।
- মানব ও সমগ্র সৃষ্টির কল্যাণে ইসলামি শাসনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সকলের নিকট উপস্থাপন।
- অন্যান্য সৃষ্টির উপকার সম্পর্কে সকলকে সঠিক ধারণা দেওয়া।
- সামাজিক বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে গোপন বা প্রকাশ্যে শারীয়াহ কোর্ট চালু করা, যেন জনগণ অনৈসলামিক সরকারের সকল ব্যবস্হাপনা থেকে অমুখাপেক্ষী হতে পারে।
- জনসমাজে অশ্লীলতার প্রসার ঠেকাতে ছোট ছোট পরিসরে প্রয়োজন ও সামর্থ্যানুসারে নাহী আনিল মুনকার অব্যাহত রাখা।
- হারাম পণ্য ও অত্যাচারী কাফির-মুশরিকদের উৎপাদিত পণ্য বর্জনের সামাজিক আন্দোলনকে আরও বেগবান করা।
- সুদ ও মাদকের বিরুদ্ধে জনসচেতনা তৈরি এবং গোপন ও প্রকাশ্য আন্দোলন চালানো।
- নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য প্রতিরোধ কর্মসূচি বাস্তবায়ন।
- দ্বীনি ইলম চর্চাকেন্দ্রে পৃষ্ঠপোষকতা করা।
- শিশুদের মাঝে ঈমান, ইসলামি নৈতিকতা ও সঠিক জ্ঞানের প্রসার ঘটানো।
- বিভিন্ন দুর্যোগ এবং নানাবিধ সামাজিক সংকটের শিকার ব্যক্তি বা সমষ্টির জন্য “জরুরি সহায়তা” কার্যক্রম চালু রাখা।
- ইসলামি নির্দেশনালোকে সামাজিক কৃষি ও বনায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা।
তানজীম সংশ্লিষ্ট যাবতীয় ব্যবস্থাপনা ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে শারীয়াহ প্রদত্ত মানদণ্ড বজায় রেখে পারস্পরিক পরামর্শ বা শুরার ভিত্তিতে।
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللَّهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَএটা আল্লাহর এক দয়া যে, তুমি এদের সাথে ছিলে কোমল প্রকৃতির, যদি তুমি নিষ্ঠুর ও পাষাণ হৃদয়ের হতে তাহলে এসব লোক তোমার আশপাশ থেকে সরে যেতো, অতএব তুমি এদের মাফ করে দাও, এদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করো, কাজকর্মের ব্যাপারে এদের সাথে পরামর্শ করো, অতঃপর সংকল্প একবার যখন তুমি করে নেবে তখন আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করো; অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা তাওয়াক্কুলকারীদের ভালবাসেন। (আল ইমরান ৩: ১৫৯)
وَالَّذِينَ اسْتَجَابُوا لِرَبِّهِمْ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَمْرُهُمْ شُورَى بَيْنَهُمْ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَযারা তাদের রবের ডাকে সাড়া দেয়, সলাত প্রতিষ্ঠা করে, যাদের কাজকর্মগুলো পারস্পরিক পরামর্শই হয় তাদের পন্থা, আমি তাদের যে রিযিক দান করেছি তা থেকে তারা খরচ করে।(আশ শুরা ৪২: ৩৮)
আর পরামর্শ প্রদানকারীও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যোগ্য, জ্ঞানী ও দায়িত্ববান হওয়া জরুরি তাহলে কর্মসমূহ সহজে, সঠিক পন্থায়, সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা সম্ভব। খোলাফায়ে রাশিদীনের মাজলিসেও এরূপ জ্ঞানী ও যোগ্য লোকরাই থাকতেন। সুতরাং এর জন্য তানজীমে একদল যোগ্য ও দায়িত্ববান লোক থাকবেন যারা সঠিক পরামর্শ দেবেন, আমীর নির্ধারণ করবেন এবং বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা দৃঢ় চিত্তে গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নে আমীরকে সহযোগিতা করবেন। তাদেরকে শূরা সদস্য বলে সম্বোধন করা হবে।
জামাআতুল মুজাহিদীন তানজীমের আমীর, শূরা সদস্য ও বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্বশীল মনোনয়নের জন্য প্রাথমিক যোগ্যতা হিসেবে একজন বাইয়াতপ্রাপ্ত সদস্যের মাঝে নিম্নোক্ত বিষয়াবলির সমাবেশ থাকা জরুরি মনে করেঃ
- মুমিন, মুত্তাকী, সৎকর্মশীল, ধৈর্যশীল হওয়া।
- জ্ঞানী হওয়া। যিনি প্রয়োজনীয় স্তরের যথাযথ জ্ঞান অর্জন করবেন যাতে নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারেন এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিতে পারেন।
- শারীরিক ও মানসিকভাবে পূর্ণ সক্ষম ও দক্ষ হওয়া।
- মোটিভেশান, অর্গানাইজেশান এবং পরিচালনা পর্বে দক্ষ, অভিজ্ঞ ও যথেষ্ট সামর্থ্যবান হওয়া, যাতে নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে সক্ষম হন।
- ন্যায় পরায়ণ (আদিল) হওয়া। বেইনসাফি- জুলুম ও অন্যায় পক্ষপাতিত্ব থেকে মুক্ত থাকা।
যোগ্যতার এই মানদণ্ড সকল স্তরের দায়িত্বশীলদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যিনি যতবেশি যোগ্যতার অধিকারী তার মূল্যায়ন ততবেশি হবে এবং তিনি আমীর বা কোনো স্তরে দায়িত্ব পালনের অধিক উপযুক্ত বা হক্বদার বিবেচিত হবেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোনো শর্ত শিথিলযোগ্য। যেমন, শিক্ষা, ইফতা ইত্যাদি অসামরিক ক্ষেত্রে শারীরিক সক্ষমতা বা দক্ষতা পরিপূর্ণ থাকা জরুরি নয়...ইত্যাদি।
আমীর আত তানজীম কিংবা কোনো পর্যায়ের একজন দায়িত্বশীল তার দায়িত্ব পালনের অযোগ্য বিবেচিত হবেন যখন তার মধ্যে নিম্নোক্ত বিষয়াবলি পাওয়া যাবে---
- স্পষ্ট কুফরিতে লিপ্ত হওয়া।
- প্রকাশ্য কবীরাহ গুণাহ/হারামে লিপ্ত থাকা।
- জিহাদি কর্মকাণ্ডে এমন নিষ্ক্রিয় হওয়া, যার ফলে তনজীমের উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়।
- ব্যক্তিগত দুর্বলতা হেতু কিংবা দীনের বৃহত্তম স্বার্থে (যেমনঃ ঐক্য, গতিবৃদ্ধি ইত্যাদি প্রয়োজনে) নিজেই যদি পদত্যাগের আবেদন করেন।
নিয়োগবোর্ড অবশ্যই জেনে থাকবেন যে, মৌলিক যোগ্যতায় প্যানেল আমীরগণ সকলেই সমপর্যায়ের। এখন পরামর্শ সভায় অতিরিক্ত যোগ্যতাকে বিশেষভাবে মূল্যায়ণ করা হবে। অতিরিক্ত যোগ্যতার মধ্যে থাকবেঃ
ইলমের ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রগণ্যতা, তানজীমি জীবনের সিনিয়রিটি, তানজীমি জীবনের ত্যাগ, দায়িত্ব পালনের বিশেষ কোনো অভিজ্ঞতা, বয়সে সিনিয়রিটি…. ইত্যাদি। এক্ষেত্রে সালাতে ও সফরে ইমাম নির্বাচনের মানদণ্ড বর্ণিত থাকা হাদীসটির আলোকে কিয়াস করা যেতে পারে। যেখানে প্রথমে আল কুরআনের পারদর্শিতা দেখতে বলা হয়েছে। এতে সকলে সমান হলে সুন্নাহ’র পারদর্শিতা, এতে সকলে সমান হলে হিজরতে কে এগিয়ে, এতে সকলে সমান হলে ইসলাম গ্রহণে কে এগিয়ে, অতঃপর এতেও সকলে সমান হলে বয়সের সিনিয়রিটি দেখতে বলা হয়েছে। (মুসলিম, কিতাবুস সালাত)
নিয়োগ বোর্ড এখানে প্রয়োজন বোধ করলে আবু বকর, উমার, উসমান রাদিআল্লাহু আনহুমদের খলীফা মনোনয়ন প্রক্রিয়ার কোনটি বিবেচনা করতে পারবেন। এসবই সুন্নাহ। স্থান-কাল-পাত্রভেদে যে কোনটি প্রযোজ্য। কোন একটি নির্ধারণের আবশ্যকতা নেই। যোগ্যতার মানদণ্ড অক্ষুণ্ন রেখে নিয়োগ করা হলে যে কোনোটির মধ্যেই কল্যাণ আছে।
আমীর যদি শত্রুর হাতে বন্দি হয়ে যান, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে তানজীমের শুরা বোর্ড পরামর্শের ভিত্তিতে শুরার অধিকতর যোগ্য ব্যক্তিকে ‘ভারপ্রাপ্ত আমীর’ হিসেবে নিয়োগ দেবে। ভারপ্রাপ্ত আমীর তার পূর্বের তানজীমি দায়িত্বে বহাল থেকেই আমীরের দায়িত্ব পালন করবেন। আমীরের নিশ্চিত মৃত্যু বা অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত ‘ভারপ্রাপ্ত আমীর’ই হবেন প্রধান নির্বাহী। বন্দিত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার পর অপসারিত হওয়ার মত কোন কারণ না থাকলে বন্দি থাকা আমীরই পুনরায় আমীরের যথারীতি দায়িত্ব পালন করবেন। সেই সাথে ‘ভারপ্রাপ্ত আমীর’ তার মূল তানজীমি দায়িত্বের মধ্যে থাকবেন।
“হালাল ও হারাম উভয়ই স্পষ্ট। এই দুইয়ের মাঝখানে রয়েছে সন্দেহজনক বিষয়, যা অধিকাংশ লোক জানে না। যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয় এড়িয়ে চলে, সে তার দ্বীন ও সম্মান হিফাজত করে”। সুতরাং, প্রতারণা-জুলুম-অন্যায়ভাবে দখলের মত সকল প্রকার হারাম পন্থা এবং যাবতীয় সংশয়পূর্ণ পন্থায় অর্থোপার্জন বা সংগ্রহ করা থেকে তানজীম সুস্পষ্টরূপে নিষেধ করে এবং নিজেদেরকে বিরত থাকার গুরুত্বারোপ করে। হালাল সম্পদ অল্প হলেও আল্লাহ তাতে বারাকাহ দেন। বান্দার হারাম উপায়ে উপার্জিত অর্থ ব্যয়ে বারাকাহ দেওয়া হয় না এবং তা কবুলও হয় না। “কখনোই মন্দের দ্বারা মন্দ বিলুপ্ত হয় না। কিন্তু ভালোর দ্বারা মন্দ বিলুপ্ত হয়”- তানজীম সর্ব স্তরের কর্মী-সাথী-সদস্যদের এই মূলনীতি আকড়ে ধরতে নির্দেশ দেয়।
তানজীমের সম্পদ (বায়তুল মাল) আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত আমানত এবং কারো ব্যক্তিগত সম্পদ নয়। এ সম্পদ ইসলাম ও মুসলিমদের কল্যাণে ব্যয় হবে। জামাআহ’র আমীরেরও অধিকার নেই তা যথেচ্ছা ব্যয় করার। তবে জামাআহ’র আমীর মুসলিমদের সাথে পরামর্শের ভিত্তিতে মুসলিমদের কল্যাণে চাহিদা-প্রয়োজন-সামর্থ্য অনুযায়ী ইনসাফপূর্ণ ভাবে ব্যয় করবেন এই এখতিয়ার ও নিদের্শনা শারীয়াহ তাকে প্রদান করেছে। যাবতীয় সম্পদ ব্যয়ে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করতে হবে। খিয়ানত-অপচয়-অপব্যয় ও কৃপণতা হতে বেঁচে থাকতে হবে। অর্থনৈতিক হিসাবে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে এবং এ ব্যাপারে অবহেলা বা শিথিলতা প্রর্দশন করা যাবে না।
সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমা কুফ্ফারদের চাপিয়ে দেওয়া সুদ ভিত্তিক অর্থনীতির প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে তানজীম সদা সচেষ্ট। মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদের অন্যতম যুদ্ধাস্ত্র হল অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের মাধ্যমে সারা বিশ্ব থেকে একঘরে রেখে তাদের বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য করা। বিশ্বকে তাদের অধীন রাখতে তাদের সাম্রাজ্যবাদী এজেন্ডার অংশ হিসেবে তারা বিশ্বব্যাপী এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। এত্থেকে মুক্ত থাকতে করণীয় হল:
- আমাদের অভাবী ও মুখাপেক্ষী ব্যক্তিদের সাহায্য-সহযোগিতা করা। প্রয়োজনের মুহূর্তে কর্যে হাসানা দেওয়া।
- প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থান ও ব্যবসায়িক পরিবেশ সৃষ্টি করা। বেকার লোকদের স্বনির্ভর করা। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক বেকার দরিদ্রকে কাঠুরে বানিয়ে স্বাবলম্বী করেছেন নিশ্চয়ই এখানে উম্মতের জন্য শিক্ষা রয়েছে।
- যথা সম্ভব পশ্চিমা ক্রুসেডার কুফ্ফার ও তাদের দোসরদের পণ্য ব্যবহার থেকে বিরত থাকা। তাদের সাথে ব্যবসায়িক লেনদেন নির্ভরতা বন্ধ করতে সচেষ্ট হওয়া।
- মানব জীবনের মৌলিক চাহিদা ও নিত্য-প্রয়োজনের (খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসা প্রভৃতির) পণ্য-ব্স্তু নিজেদের উৎপাদন করা। যথা সম্ভব নিত্য-নতুন গবেষণা–আবিষ্কারের প্রচেষ্টা চালানো এবং এর উপর জোর দেওয়া ও বিনিয়োগ করা।
নিশ্চয়ই এই সমস্ত কাজ একমাত্র মুসলিমদের ভ্রাতৃত্ব, অটুট ঐক্য এবং পরস্পর সহযোগী-সহমর্মী হওয়ার মাধ্যমেই করা সম্ভব। এ ব্যাপারে তানজীম সবাইকে সতর্ক ও সচেতন হতে তাগিদ দেয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَالَّذِينَ كَفَرُوا بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ إِلَّا تَفْعَلُوهُ تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ وَفَسَادٌ كَبِيرٌআর যারা কাফির তারা পরস্পর সহযোগী, বন্ধু। তোমরা যদি এমন ব্যবস্থা না করো, তবে জমিনে ফিৎনা-বিপর্যয় বিস্তার লাভ করবে এবং বড় ফাসাদ তৈরি হবে। (আনফালঃ৭৩)
তানজীমভুক্ত সবাইকে কর্মজীবী ও স্বনির্ভর হওয়ার প্রতি তানজীম গুরুত্বারোপ করে। বেকারত্ব দূরীকরণে যথাসাধ্য পদক্ষেপ গ্রহণের চেষ্টা করে। এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল কৃষি ভিত্তিক উৎপাদন এবং লোকাল ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসার মাধ্যমে উপার্জনের পথ তৈরি করা। সালফে সালেহীন ইমামগণ মুসলিমদের রিযকের উৎস হিসেবে কৃষি কাজের উপর অধিক জোর দিয়েছেন, যেমনটা ইমাম ইবনু হাযম তার আল মুহাল্লাতে, ইমাম নববী তার আল মাজমুআতে ও অন্যরা নিজ নিজ কিতাবে তুলে ধরেছেন। হ্যা, কৃষি কাজ যখন জিহাদ বর্জনের কারণ হবে তখন তা প্রত্যাখ্যাত। একই ভাবে ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবসার অনেক গুরুত্বের কথাও বর্ণিত হয়েছে। আমরা মাল ও জান দুটো দ্বারাই জিহাদ করতে আদিষ্ট হয়েছি। তানজীম মনে করে প্রত্যেক সদস্য আর্থিকভাবে সচ্ছল ও শক্তিশালী হলে তানজীমও সচ্ছল ও শক্তিশালী হবে এবং দীনের কাজ ত্বরান্বিত হবে ইনশাআল্লাহ। তানজীম এটাও মনে করে যে গানীমাহ থেকে প্রাপ্ত সম্পদ উত্তম রিজিক, এবং সেটার উপযোগিতা তৈরি হওয়া মাত্র যথা পদক্ষেপ গ্রহণে তানজীম সচেষ্ট। এছাড়াও তানজীম শ্রমনির্ভর অন্যান্য হালাল উপার্জনের পন্থাতেও সাধ্যমত সহযোগিতা করে থাকে।
যে সকল খাত থেকে তানজীমের আয় হতে পারেঃ
- গানীমাহ ও মালে ফাই।
- আমওয়ালুল মুসলিমীন বা মুসলিমদের সম্পদ যা তারা দান করে।
- হালাল ব্যবসার মাধ্যমে উপার্জিত মুনাফা।
- জিজিয়া ও খারাজ। আল্লাহর ইচ্ছায় শত্রুরা পরাজিত হলে এবং বশ্যতা স্বীকার করে নিলে এই সুযোগ তৈরি হবে।
- যাকাত, উশর। এ সম্পদ কেন্দ্রীয় বায়তুল মালে সাধারণ সম্পদ হিসেবে জমা করা হয় না বরং তার নির্ধারিত খাতে প্রদান করা হয়। ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ যাকাতের ফরজিয়াত যাতে যথাযথ পন্থায় আদায় হয় সে লক্ষ্যে তানজীম শারঈ পদ্ধতিতে সুষ্ঠুভাবে মাল সংগ্রহ ও যথাযথ মাসরাফে বন্টনের দায়িত্ব পালন করে।
এ সম্পদ ইসলাম ও মুসলিমদের কল্যাণে ব্যয় হয়। এর মধ্যের প্রধান খাতসমূহ হল,
- জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ বা ক্বিতালি কর্মসূচি সংক্রান্ত (সামরিক) কাজে ব্যয়।
- নির্যাতিত মুসলিম-মুজাহিদদের মুক্তি ও সাহায্যার্থে ব্যয়।
- অসহায়, দরিদ্র ও ইয়াতিমদের সাহায্য প্রদান।
- শিক্ষা-দাওয়াহ-প্রকাশনা-প্রচারণা ইত্যাদি সংক্রান্ত কাজে ব্যয়।
- জামাআহ বা তানজীমের অফিসিয়াল কাজে ব্যয়।
- অনুচ্ছেদ-১ এ বর্ণিত সাধারণ মূলনীতির অনুসরণ বজায় রাখা।
- ইসলামি সমরনীতি মেনে চলা।
- সামরিক অভিযানের টার্গেট নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে তানজীম ও উম্মাহ’র মাসলাহা ও মাফসাদা (লাভ-ক্ষতি) বিবেচনা করা।
- স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনায় উপযুক্ত যুদ্ধ কৌশল অবলম্বন করা।
তানজীম তার সামরিক অভিযানের টার্গেট বা নিশানা চূড়ান্ত করণের ব্যাপারে শারীয়াহ’র সুস্পষ্ট দালীল-আদিল্লাহর অনুসরণ করে। বিপরীতে, অস্পষ্ট শারঈ ব্যাখ্যা,তাবীলের বা অনুমানের ভিত্তিতে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করাকে তানজীম বৈধ মনে করে না। যেকোন টার্গেট নির্ধারণে যথাযথ শারঈ পন্থায় তদন্ত ও যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে সুনিশ্চিত হওয়ার পরই তানজীম তার গৃহীত সিদ্ধান্ত প্রকাশ করে।
শারীয়াহতে অনুমোদিত বা বৈধ, কিন্তু সাধারণ মানুষের উপলব্ধির বাইরে বা মুজাহিদীনকে সাধারণ জনগণ থেকে দূরে ঠেলে দেয় এমন সব সামরিক অভিযান থেকে তানজীম বিশেষ যুদ্ধকৌশল নীতি মেনে নিজেদেরকে সাময়িকভাবে বিরত রাখে।
তানজীম সামরিক অভিযান পরিচালনায় কোন ভুল করলে নিঃসংকোচে নিজেদের ভুল স্বীকার করে সংশোধন হয়ে যাবে ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। অপারেশন সম্পাদনকারী মুজাহিদদের জবাবদিহিতার আওতায় এনে কারো ত্রুটি বা অন্যায় পরিলক্ষিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কোন নিরপরাধ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হলে শারঈ পন্থায় তার প্রতিবিধান ও ক্ষতিপূরণ আদায়ে তানজীম যথাসাধ্য চেষ্টা করবে ইনশাআল্লাহ।
জামাআতুল মুজাহিদীন সকল কাফির-মুশরিকদের সাথে ক্বিতাল বৈধ জ্ঞান করে। তবে মুজাহিদদের অধীনে জিযিয়ার চুক্তি, বা অন্য কোন নিরাপত্তার চুক্তিতে আবদ্ধ কাফির মুশরিকদের জান মালে আঘাত করা চুক্তির শর্তাধীনে হারাম জ্ঞান করে।
যেসব (আসলী) কাফির-মুশরিক ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার শত্রুতা, বিরোধিতা, ষড়যন্ত্র বা যুদ্ধে জড়িত নয় এবং শান্তিপূর্ণভাবে ও সাধারণভাবে বসবাস করে, তাদেরকে তানজীম ক্বিতালের লক্ষ্য বানায় না। তানজীম তাদের জান-মালের উপর আক্রমণ করে না বরং তাদের সাথে দাওয়াতি কাজের উপযোগী আচরণ করে। একইভাবে, ইসলাম ও মুসলিমদের শত্রুতায় লিপ্ত নয় কাফির-মুশরিকদের এমন ধর্মীয় নেতাদেরকে তানজীম টার্গেট করে না।
আহলে কিতাবদের তথা ইয়াহুদি-নাসারাদের প্রকৃত ধর্মগুরু,সন্ন্যাসী ও তাদের ধর্মীয় উপাসনালয়কে তানজীম সামরিক অভিযানের টার্গেট করা থেকে বিরত থাকে। তবে, তাদের কোনো ধর্মগুরু যদি মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদের সেনাবাহিনীকে উস্কানি দেয় কিংবা যদি একজন ধর্মগুরু বা সন্যাসীর রাজনৈতিক বা সেনা উপদেষ্টা ইত্যাদি আরও কোনো পরিচয় থাকে তাহলে উক্ত পরবর্তী পরিচয়ের কারণে তাকে টার্গেট করাতে কোন দোষ নেই। এমনিভাবে তাদের কোন ধর্মীয় উপাসনালয় যদি মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা কোন ধরণের চক্রান্তের ঘাঁটি বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে তার ধ্বংস সাধনে তানজীম কার্পণ্য করবে না।
জামাআতুল মুজাহিদীন মূর্তি ও মূর্তি পূজকদের প্রতি ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)এর ধারায় অনুসৃত শেষ নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আচরিত পন্থার পুরোপুরি অনুসরণ করতে চায়। এর মধ্যে রয়েছে-
- দাওয়াত উপস্থাপন,
- ঘৃণা-বিদ্বেষ বজায় রাখা ও সম্পর্কচ্ছেদ,
- বিজয়ের আগে ও পরে মূর্তিপূজক ও মূর্তির প্রতি আচরণ।
জামাআতুল মুজাহিদীন মূর্তিপূজক মুশরিকদের মধ্যে যারা সাধারণ, নিরীহ ও শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসকারী তাদেরকে হামলার টার্গেট করবে না। কিন্তু তানজিম মূর্তিকে নিরাপত্তা দেবে না, তবে মুশরিকদের সাথে বিভিন্ন চুক্তি এবং বিজয় লাভের পর জিম্মি হিসাবে তাদের নিরাপত্তা প্রদানের সুযোগ আছে বিধায় অন্যন্য বিশেষ ব্যবস্থা শারীয়াহর মানদণ্ড বজায় রেখে গ্রহণ করা হবে ইনশাআল্লাহ্।
জামাআতুল মুজাহিদীন জানাজা, মাসজিদ-মাদ্রাসা, ঈদগাহ, হাট-বাজার এবং এমন সকল স্থান, যেখানে সাধারণ মুসলিমরা জমায়েত হয়ে থাকে সেখানে সামরিক হামলা চালাবে না। তবে, ঐ সকল স্হানে নির্দিষ্ট কাউকে হামলার টার্গেট করলে জনসাধারণের ক্ষয়ক্ষতি এড়িয়ে যাওয়ার উপায় করে নিবে।
ইসলামি সমরনীতি অনুসারে জামাআতুল মুজাহিদীন নির্দিষ্টভাবে কাফির মুশরিকদের নারী, শিশু, বয়োবৃদ্ধ, পাগল ও শারীরিকভাবে যুদ্ধ করতে অক্ষম এমন শ্রেণীকে হামলার টার্গেট বানায় না। তবে অন্য টার্গেট বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ঐসকল শ্রেণীর কেউ হতাহত হলে সেটা ভিন্ন বিষয়। একইভাবে ঐসকল শ্রেণীর কেউ যখন চিন্তা বা বুদ্ধি কিংবা শরীর দিয়ে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বা যুদ্ধে লিপ্ত হবে তখন তাকে টার্গেট করা হবে।
বস্তুবাদী পাশ্চাত্য শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষানীতিকে তানজীম অসার, কলুষিত এবং অনেক ক্ষেত্রে হারাম মনে করে। তথাপি এই সকল স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় তথা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তানজীম হামলা করে না। কারণ জিহাদের উসুলঅনুযায়ী এইসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, কর্মচারী প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচিত নয়। উপরন্তু তাদের মধ্যে অনেকে আছে (বিশেষত মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার অধিকাংশই) যাদেরকে তানজীম সাধারণভাবে মুসলিম মনে করে।
যেহেতু জামাআতুল মুজাহিদীনের মূল ফোকাস হলো আইয়্যেম্মাতুল কুফফার ও তাদের দোসর মুরতাদ শাসক গোষ্ঠী, তাই জামাআত এখানে পার্শ্বীয় লড়াই এড়িয়ে চলা ও শত্রু না বাড়ানোর যুদ্ধ কৌশল নীতি মেনে চলে এদের সাথে যুদ্ধে না জড়াতে চেষ্টা করে। তবে, এই সমস্ত বাতিল ফিরক্বাহ যদি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের বিরুদ্ধে আগ্রাসন ও মুজাহিদীনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয় তাহলে তানজীম এখানে তাদের আগ্রাসন থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য যুদ্ধ করা জরুরি জ্ঞান করে। বিশেষ করে, তাদের নেতৃত্বকে ন্যূনতম শক্তি ব্যয়ে এমন শিক্ষা দেওয়া যাতে তারা দমে যায়।
গনতন্ত্র (Democracy), ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ (Secularism), জাতীয়তাবাদ (Nationalism), পুঁজিবাদ (Capitalism), সমাজতন্ত্র (Socialism), সাম্যবাদ (Communism); ইত্যাদি মতবাদ ধারণ করে গড়ে উঠা বিভিন্ন দলের নীতি-নির্ধারক বা এমন নেতা বা এইসকল মতবাদের ভিত্তিতে রচিত আইনের এমন বিচারক ও আইনজীবীদেরকেও হামলার জন্য টার্গেট করা হবে, যারা খোলাখুলিভাবে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধিতা করে ইসলামের সাথে নিজেদের শত্রুতা প্রকাশ করে এবং ইসলামি শারীয়াহ’র পরিবর্তে নিজেদের কুফরি মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট থাকে। জামাআতুল মুজাহিদীন শারীয়াহ’র সুস্পষ্ট দালীলের ভিত্তিতে তাদেরকে মুরতাদ গোষ্ঠী বা ব্যক্তি হিসাবে সাব্যস্ত করে এবং তাদেরকে হত্যার জন্য টার্গেট করা বৈধ মনে করে। এই নেতারা সরকারী দলে থাক কিংবা সরকার বিরোধী বা নিরপেক্ষ দলে থাক সকলের ব্যাপারে একই সিদ্ধান্ত।
জামাআতুল মুজাহিদীন মনে করে, এরা 'আম' ভাবে আহলুর রিদ্দার অন্তর্ভুক্ত (মুরতাদ গোষ্ঠী)। তবে জামাআতুল মুজাহিদীন এসব বাহিনীতে কর্মরত সকলকে ব্যক্তিগত ভাবে তাকফীর করে না। শারীয়াহ প্রতিষ্ঠার কাজের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া সশস্ত্র বাহিনীর বা ধর্মনিরপেক্ষ-ধর্মহীন সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকা বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাকে তানজীম ক্বিতালি অপারেশনের নিশানা বানাতে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। তারা বর্তমানে কর্মরত থাক কিংবা অবসরে যাক, সব সময়ের জন্যই তাদেরকে নিশানা বানানো হবে। তবে কেউ তাওবা করে সংশোধিত হলে তার বিষয়টি শারীয়াহ’র মানদণ্ডে যাচাই করা হবে। একইভাবে উক্ত সরকারের প্রশাসনে নিয়োজিত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা জিহাদের উসূল অনুযায়ী হামলার যোগ্য জামাআতুল মুজাহিদীন তাদেরকেও হামলার টার্গেট বানাবে।
দেশি-বিদেশী বিভিন্ন এনজিও, মিশনারি, ক্লাব ইত্যাদির মধ্যে যে বা যারা অসহায় মুসলিমদেরকে সাহায্যের নামে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে ধর্মান্তরিত করার কাজে নিয়োজিত অথবা ইসলাম ও মুসলিম ভূখণ্ডের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত সেসব সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ক্বিতালি পদক্ষেপ গ্রহণ করা তানজীম বৈধ মনে করে। তবে এক্ষেত্রে ঐসকল প্রতিষ্ঠানে চাকুরিরত সাধারণ কর্মীরা টার্গেটের অন্তর্ভুক্ত নয়। টার্গেট থাকবে প্রতিষ্ঠানের মাল-সম্পদ থেকে গানীমাহ কালেকশন, প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিসাধন ও নেতৃস্থানীয় বিশেষ ব্যক্তির উপর আক্রমণ। উল্লেখ্য, এসব প্রতিষ্ঠানে অভিযান করা না করার বিষয় নির্ধারিত হবে তানজীমের কর্মপরিকল্পনা এবং সমসাময়িক স্ট্রাটেজির উপর ভিত্তি করে।
জামাআতুল মুজাহিদীন মনে করে আল্লাহর দীনের শত্রুদের বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও বানিজ্যিক স্বার্থে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার সামরিক অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে তাদের দুর্বলতর করে দেওয়া সম্ভব। এসকল হামলার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, শত্রুদের ক্ষতি সাধন ও গানীমাহ আহরণ করা। ঐসকল স্বার্থের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানের যারা চাকুরিরত কর্মচারী, তাদেরকে এ জাতীয় হামলার টার্গেট বানানো হবে না। তবে এইক্ষেত্রে অভিযান করা বা না করার বিষয় নির্ধারিত হবে তানজীমের কর্মপরিকল্পনা এবং সমসাময়িক স্ট্রাটেজির উপর ভিত্তি করে।
কথিত বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক, বক্তা, ব্লগার, লেখক, প্রকাশক; এদের মধ্যে কিংবা অন্যান্য শ্রেণী ও পেশার যে বা যারাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার সম্পর্কে, তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে এবং দ্বীন ইসলামের কোন বিষয় নিয়ে কটূক্তি করবে বা বিদ্রুপ কিংবা উপহাস করবে, এমন ব্যক্তিদের হত্যার জন্য তানজীম ক্বিতালি অভিযান পরিচালনা করবে।
যেসব নাম সর্বস্ব ইসলামি দলের নেতৃত্ব মুজাহিদীনের বিরুদ্ধে খোলাখুলি বিরোধিতায় লিপ্ত হয় এবং ইসলামের শত্রুদের সাথে হাত মিলিয়ে মুজাহিদীনের ক্ষতি করতে তৎপর থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়, তাদের নেতৃত্বকে শারীয়াহ’র দালীলের ভিত্তিতে তাকফীর করা ও তাদের বিরুদ্ধে ক্বিতালি পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়টি তানজীম বিবেচনা করে। যদিও এসব ক্ষেত্রে মাসলাহা এবং কৌশলগত দিক বিবেচনায় ফিলহাল কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকে। কেবলমাত্র ঐসব ব্যক্তি বা নেতাকে বর্তমান নিশানার অন্তর্ভুক্ত করে যারা মুজাহিদীনদের সাথে সশস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত বা সন্দেহাতীতভাবে কুফ্ফারদের নিয়োগকৃত জাসুস হিসাবে প্রমাণিত।
তানজীম এই নীতি অবলম্বন করে যে, “পাপ যার শাস্তি তারই, একজনের পাপের শাস্তি অন্যকে নয়”। সুতরাং, তানজীমের নিশানা যখন নির্দিষ্ট অপরাধে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তি, তখন ঐ ব্যক্তির স্ত্রী, সন্তান বা আত্মীয়-স্বজন এই নিশানার অন্তর্ভুক্ত হবে না।
নাহী আনিল মুনকার জামাআতুল মুজাহিদীনের নিয়মিত কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত একটি বিষয়। অশ্লীলতার বিস্তার সহায়ক অনুষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠান, সূদী প্রতিষ্ঠান, মদ-জুয়ার আসড়, হারাম পণ্যের উৎপাদন, বিক্রি ও সংরক্ষণ সেন্টার, বিভিন্ন যুলুম ও শয়তানী সিন্ডিকেট, শিরক -বিদআতি কর্মের ব্যাপক ও প্রকাশ্য মেলা, আরও যে সকল পাপাচার সেন্টার আছে….এসকল ক্ষেত্রে রক্তপাত এড়িয়ে স্থান-কাল-পাত্র এবং লাভ-ক্ষতি বিবেচনা করে ভিন্ন ভিন্ন নামে, বেনামে বা সাধারণ জনতার ব্যানারে বাঁধা প্রদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। কখনো কোনো ক্ষেত্রে কেবল হুমকি দিয়ে উদ্দেশ্য সাধিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে হুমকি দিয়েই অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হবে। জনসাধারণকেও ঐ জাতীয় স্থান ও অনুষ্ঠানাদি থেকে দূরে থাকার বা রাখার জন্য বিভিন্নভাবে প্রচার-প্রোপাগাণ্ডা চালানো হবে এবং এসকল অন্যায় অপকর্মের বিরুদ্ধে জনসমর্থন গড়ে তোলা হবে।
সাধারণ জনতার জানমালের নিরাপত্তাহীনতা এবং ত্রাসের রাজত্ব কায়েমকারী এমন এলাকাভিত্তিক সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী ও ডাকাত ব্যক্তি বা গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে জামাআতুল মুজাহিদীন প্রকাশ্য গণপ্রতিরোধ কর্মসূচির বাস্তবায়ন করবে। এবং নিতান্ত অবস্থায় প্রয়োজনীয় মাত্রার শক্তি ব্যয়ে তাদেরকে দমন করার বিষয়টি তানজীম বিবেচনা করবে।
জামাআতুল মুজাহিদীন গ্লোবাল জিহাদের অভিভাবক সংগঠন “আল কায়েদা”র টার্গেটের সাথে সমন্বয় করে এ উপমহাদেশে ক্রুসেডার তথা ইয়াহুদি-নাসারাদের সামরিক জোটে যারা অংশীদার এবং যারা কোনো জোটভুক্ত না হয়েও মুসলিমদের বা মুজাহিদদের ক্ষতি বা ধ্বংস সাধনে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে ঐসকল দেশের সামরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থকে সামরিক হামলার টার্গেট বানাবে। যেমনঃ আমরিকার নেতৃত্বাধীন বিভিন্ন জোটের সদস্য দেশ, ন্যাটোর সদস্য দেশ, চীন, রাশিয়া, ইসরায়েল ইত্যাদি দেশের স্বার্থ; যা ভারত, বাংলাদেশ ও বার্মাতে ছড়িয়ে রয়েছে। এছাড়াও ক্রুসেডার এবং ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত প্রত্যেক দেশের উৎপাদিত পণ্য বর্জনে সাধারণ জনতাকে উৎসাহিত ও সহযোগিতা করা হবে। সাধারণ জনতার মাঝে ঐসকল ইবলীসী শক্তিগুলোর প্রতি ঘৃণা, বিদ্বেষ, শত্রুতা ও বিরোধিতা ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
জামাআতুল মুজাহিদীন মনে করে, ইন্ডিয়া হলো সমগ্র বিশ্বের শিরক ও মুশরিকদের উৎস ভূমি এবং মূলকেন্দ্র। এই তানজীম আরো মনে করে, ইন্ডিয়া হলো উপমহাদেশের সকল পাপাচার, নাস্তিক্যবাদ এবং ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মূল হোতা ও পৃষ্ঠপোষক। জামাআতুল মুজাহিদীন আরও মনে করে, ইন্ডিয়া হলো এ উপমহাদেশে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় যাবৎ সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত মূল ইবলীসী শক্তি। জামাআতুল মুজাহিদীন আরও মনে করে, ইন্ডিয়াকে দুর্বলতর করতে না পারলে উপমহাদেশের এই অঞ্চলে ইসলামি ইমারত প্রতিষ্ঠার বিষয়টি কখনোই সম্ভব হবে না। সুতরাং, ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে জামাআতুল মুজাহিদীন বিশেষ সামরিক কৌশল প্রয়োগ করবে। এই কৌশলের মধ্যে রয়েছে:
- ইন্ডিয়ার সবধরণের সামরিক, নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থে নিয়মিত হামলা চালানোর উপায় বের করা।
- ইন্ডিয়াকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করা। এই কৌশল বাস্তবায়নে ইন্ডিয়ার বিভিন্ন রাজ্যে স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীগুলোকে প্রয়োজনীয় উস্কানি দেওয়া। এটা হলো এক শত্রুর বিরুদ্ধে অন্য শত্রুকে লাগিয়ে রাখার কৌশল।
- কাশ্মীরের মুজাহিদদের যুদ্ধকে আরও শক্তিশালী করতে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখা।
- ইন্ডিয়াতে নির্যাতিত মাজলুম বন্দি ভাই-বোনদেরকে মুক্তির জন্য সর্বাত্মক অভিযান চালানোর চেষ্টা করা।
- সেভেন সিস্টারস সহ অন্যান্য রাজ্যের মুসলিমদেরকে ক্বিতালি আমলের জন্য সংগঠিত করা।
- গযওয়াতুল হিন্দের ফযীলত তুলে ধরে সকল মুসলিমকে ইন্ডিয়া বিরোধী জিহাদ ক্বিতালের কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা।
- উপমহাদেশের সর্বত্র জনগণের মাঝে ইন্ডিয়া সরকার বিরোধী মনোভাব জোরদার করার চেষ্টা করা।
- সরাসরি ইসলাম ও মুসলিমদের ক্ষতি সাধনে লিপ্ত ইন্ডিয়ান প্রত্যেক শ্রেণী-পেশার লোক ও সরকারের মদদপুষ্ট হিন্দুত্ববাদী ইসলাম বিদ্বেষী সশস্ত্র দলগুলোর উপর ক্রমাগত হামলা চালিয়ে ইন্ডিয়াকে অস্থির করে তোলার চেষ্টা করা।
সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের বাসস্থান বাংলাদেশে মুসলিম নামধারী মুরতাদ-ত্বগুত শাসকগোষ্ঠী দ্বীন প্রতিষ্ঠায় প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী ক্রুসেডার আমেরিকা এবং স্থানীয় মোড়ল ভারতের ইসলাম ও মুসলিম বিরোধী আগ্রাসী এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। দীনের দাঈ ও মুজাহিদদের গ্রেপ্তার- নির্যাতন, জেল- জুলুম, হত্যার মত জগণ্য অপরাধে লিপ্ত রয়েছে। যারাই দ্বীন প্রতিষ্ঠার আওয়াজ তুলছে তাদের আওয়াজ বন্ধ করতে যাবতীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিভিন্নভাবে ইসলামের নাম-নিদর্শন মুছে ফেলার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। সুতরাং এ পর্যায়ে তানজীমের পদক্ষেপ হল:
- যেহেতু তানজীম বর্তমানে এই অঞ্চলে ক্রুসেডার আমেরিকা-ইসরাইল, তাদের দোসর এবং উপমহাদেশে তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র আঞ্চলিক মোড়ল ভারতকে মূল ফোকাস করে জিহাদের স্ট্র্যাটেজি ও লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করে সেহেতু তানজীম পার্শ্বীয় যুদ্ধ এড়িয়ে চলতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। সুতরাং স্থানীয় মুরতাদ শাসক বা তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট পদাধিকারী সরকারী কর্মকর্তা, এবং বেসরকারী অন্যান্য সংস্থা- প্রতিষ্ঠানকে যথাসম্ভব টার্গেট বানানো থেকে বিরত থাকতে চেষ্টা করবে- যাদের টার্গেট বানানোতে আইম্মায়ে কুফফার তথা ত্বগুতের কেন্দ্রীয় শক্তির উপর তেমন প্রভাব পড়ে না এবং জিহাদ ও মুজাহিদীনদের তেমন উপকার হাসিল হয় না। আমাদের চেষ্টা থাকবে নিজেদের সীমিত শক্তিকে কেন্দ্রীয় কুফফার শক্তি তথা আইম্মায়ে কুফফারদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা যাতে সীমিত শক্তি প্রয়োগে সর্বোচ্চ ফায়দা পাওয়া যায়।
- উপমহাদেশের কেন্দ্রীয় ত্বগুত শক্তি ইন্ডিয়াকে ক্রমান্বয়ে দুর্বল থেকে দুর্বলতর ও অকার্যকর করে দেওয়ার সাথে সাথে সাধারণ জনগণকে স্থানীয় মুরতাদ ত্বগুত সরকার থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করা। একইসাথে, দাওয়াহ, স্বল্প মাত্রার শক্তি প্রয়োগ, বিকল্প ব্যবস্হাপনা প্রয়োগ ইত্যাদির মাধ্যমে জনগণকে ত্বগুতের মুখাপেক্ষিতা থেকে দূরে আনার এবং ইসলামি শাসনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করা। সরকার বিরোধী জনসমর্থন ও মুজাহিদদের আনসার গড়ে তোলা।
- নির্যাতিত-মাজলুম ভাই বোনদের সাহায্য করা, জুলুম থেকে তাদের মুক্তির ব্যবস্থা করা। বাংলাদেশের মুরতাদ শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে যারা ইসলামের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য শত্রুতায় লিপ্ত, যারা বিশেষভাবে মুসলিম-মুজাহিদ ভাইদের উপর অত্যাচার করছে, গ্রেপ্তার-জেল জুলুম-ফাঁসি দিচ্ছে তাদের অত্যাচার থেকে ভাইদের উদ্ধারে তাদের বিরুদ্ধে ক্বিতালি পদক্ষেপ গ্রহণ ও নির্যাতিত মাজলুম ভাই-বোনদেরকে মুক্তির জন্য সর্বাত্মক অভিযান চালানোর চেষ্টা করা।
বার্মার মুসলিমদের উপর গণহত্যা ও সবধরনের নির্যাতন চালানোর অপরাধে বার্মার সরকার, সামরিক বাহিনী, বৌদ্ধ ধর্মগুরুর দল ও তাদের অনুসারী, এবং সশস্ত্র গ্রুপগুলোকে তানজীম দোষী সাব্যস্ত করে। তন্মধ্যে বার্মার সরকার, সামরিক স্থাপনা এবং সামরিক বাহিনী ও সশস্ত্র দলগুলোর বিরুদ্ধে টার্গেটকে জামাআতুল মুজাহিদীন অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। এই সকল হামলার মধ্য দিয়ে মূলত মুসলিমদের উপর নৃশংসতার প্রতিশোধ কার্যক্রম চালু রাখা উদ্দেশ্য। তবে বৌদ্ধদের মধ্যে যদি কেউ মুসলিম নির্যাতনে অংশ না নিয়ে থাকে মর্মে প্রমানিত হয় তাহলে তাকে তানজীম নিশানা বানাবে না।
সেই সাথে গ্লোবাল মুজাহিদীনদের স্ট্রাটেজি অনুযায়ী ইসলামি আরাকান পুনরুদ্ধার, রোহিঙ্গা মুসলিমদের ক্বিতালের উদ্দেশ্যে সংগঠিত করা, এবং তাদের প্রতিরক্ষায় ভূমিকা পালনে চেষ্টা চালিয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ।
জামাআতুল মুজাহিদীন অবশ্যই মুশরিক অধ্যুষিত ইন্ডিয়া ও বার্মার মুসলিমদের উপর নির্যাতনের আশংকার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই দেশ দুটির উপর হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। এক্ষেত্রে, বৈশ্বিক জিহাদের প্রবীণ ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শাইখগনের পরামর্শ মেনে চলা হবে, হামলার ধরণে পরিবর্তন আনা হবে, অধিকতর প্রস্তুতি ও হিজরতের স্থান তৈরির বিষয়টিতে মনোযোগ দেওয়া হবে।
বর্তমান নামধারী মুসলিম, যারা মুরতাদ বা ত্বগুত শাসক, তাদের অধীনে কোন চুক্তির বৈধতা জামাআতুল মুজাহিদীন স্বীকার করে না। সুতরাং, (আসলি) কাফির মুশরিকদের মধ্যে যে বা যারা পৃথিবীর কোনো ভূখণ্ডের মুজাহিদদের সাথে কোনো ধরণের নিরাপত্তা চুক্তিতে আবদ্ধ কেবল তাদের চুক্তিকেই জামাআতুল মুজাহিদীন বৈধ জ্ঞান করে। শত্রু পক্ষের কোনো দেশ বা গোষ্ঠী বা ব্যক্তির সাথে নিরাপত্তা কিংবা যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়টিতে জামাআতুল মুজাহিদীন বৈশ্বিক অন্যান্য জিহাদি তানজীমের সাথে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নেবে।
শত্রু পক্ষের নির্দিষ্ট কোন অংশের সাথে গোপন কিংবা প্রকাশ্য ‘সাময়িক বা দীর্ঘ মেয়াদী যুদ্ধ বিরতি চুক্তি’ কিংবা নির্দিষ্ট সময় বা এরিয়াতে হামলা চালানো হবে না মর্মে কোন চুক্তির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে তার বিষয়ে শারীয়াহ’র মানদণ্ডের আলোকে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মুজাহিদগণের সাথে পরামর্শ করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
“মুসলিমদের কোনো একজনের দেওয়া নিরাপত্তা মানে সকলের পক্ষ থেকেই নিরাপত্তা” রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক ঘোষিত এই মূলনীতি তানজীম সকলের নিকট ব্যাখ্যা করবে। তানজীমের কোনো একজন সদস্য শত্রু পক্ষের কাউকে নিরাপত্তা দিতে চাইলে কোন পর্যায়ে কতটা দিতে পারবে তার সীমারেখা সকলকে স্পষ্ট করা হবে।
মালে গানীমাত বন্টনের ক্ষেত্রে রসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাহ ও খুলাফায়ে রাশেদীনের (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) বন্টন প্রক্রিয়ার ধারা বজায় রেখে মুজাহিদদের সকলকে সন্তুষ্ট করা হবে ইনশাআল্লাহ। তবে মালে গানীমাত বন্টনের কিছু নীতি সম্পর্কে সকলকে আগে থেকেই স্পষ্ট করে দেয়া হবে। এইসকল নীতিগুলো নিম্নরূপ:
- বিশেষ ধরনের কোন মাল সম্পদকে বন্টন প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা। এই সম্পদ জিহাদ, মুজাহিদীন ও উম্মাহ’র সামষ্টিক কল্যাণে ব্যয় করা হবে। যেমনঃ ভারী কোন সমরোপকরণ, বিশেষ স্থাপনা, বিশেষ এরিয়ার জমি ইত্যাদি জাতীয় কোন সম্পদ।
- উক্ত ১ নং ধরণের মালের পর অবশিষ্ট সম্পদের যাকাত হিসেবে “খুমুস” তথা এক পঞ্চমাংশ আলাদা করা।
- উক্ত ১ ও ২নং ধরণের মালের পর অবশিষ্ট সম্পদ থেকে যুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখা সৈনিকদের নফল বা অতিরিক্ত অংশ দেওয়ার জন্য আমীর ইচ্ছে করলে সর্বোচ্চ এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত আলাদা করে রাখতে পারবেন।
- মালে গানীমাত থেকে একজন পদাতিক সৈনিক যা পাবেন, নিজের মালিকানাধীন অশ্বারোহী সৈনিক তার দুইগুণ পাবেন। নফল হিসেবে আরও পেতে পারেন।
- মূল যুদ্ধে শরীক না হয়েও অন্যান্য সহযোগিতার কারণে একজন মুজাহিদ পদাতিক সৈনিকের সমান অংশ পেতে পারেন।
- কেউ যুদ্ধে নাম লিখিয়েছে কিন্তু হঠাৎ অসুস্থতা, বন্দিত্ব, আমীর কর্তৃক উক্ত সময়ে অন্য দায়িত্বে রেখে যাওয়া ইত্যাদি কারণে যুদ্ধে শরীক না হয়েও পদাতিক সৈনিকের অংশ পেতে পারেন।
- বর্তমান সময়ে তানজীমের বিভিন্ন শাখার সমন্বয়ে একটা অপারেশন সফল হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে এই শাখাসমূহের মধ্যে গানীমাহ বণ্টন প্রক্রিয়া কেমন হবে তা বিজ্ঞ আলিমদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে নির্ধারিত হবে।
শত্রু পক্ষের বন্দি হওয়া ও আত্মসমর্পণকারী ব্যক্তি বিষয়ক কিছু নীতি:
- শত্রু পক্ষের যুদ্ধে বন্দি হয়ে আসা ব্যক্তি ও আত্মসমর্পণকারী ব্যক্তিদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা শারঈ পদ্ধতি অনুযায়ী একমাত্র তানজীমের আমীরের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। তিনি ছাড়া এ বিষয়ে অন্য কেউ সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না। তবে সিদ্ধান্তের পূর্বে আমীর শারীয়াহ কাউন্সিল ও সামরিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন মাসুলগণের সাথে পরামর্শ করবেন। এছাড়া আমীর ইচ্ছে করলে এই পর্বে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অন্য কাউকে প্রদান করতে পারবেন, যিনি তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করবেন।
- আসলি কাফির তথা ইয়াহুদি-নাসারা, হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ ও অন্যান্যদের মধ্য থেকে যদি কেউ মুজাহিদদের হাতে বন্দি হওয়ার আগেই আত্মসমর্পণ করে এবং নিরাপত্তা কামনা করে আর নিশ্চয়তা দেয় যে মুজাহিদদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে না তাহলে তানজীম তাদেরকে নিরাপত্তা প্রদান করবে।
- আসলি কাফির ও অন্যান্যদের মধ্য থেকে যদি কেউ মুজাহিদদের হাতে বন্দি হয়ে আসে সেক্ষেত্রে তানজীম সময়, প্রেক্ষাপট, তানজীম ও উম্মাহ’র স্বার্থ বিবেচনায় নিম্নোক্ত যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন:
- বন্দিদের বিনিময়ে মুসলিম বন্দি মুক্ত করা।
- বন্দিদের বিনিময়ে মুক্তিপণ আদায় করা।
- বন্দিদের দয়া প্রদর্শন করে মুক্ত করা (যদি তাদের দ্বারা ক্ষতির আশংকা না থাকে)।
- এদেরকে হত্যা করা। তবে, যুদ্ধে বন্দি হয়ে আসা শত্রু পক্ষের পরিবারের নারী-শিশু-বৃদ্ধ-অক্ষম এদের হত্যাকাণ্ড পরিহার করে উপর্যুক্ত তিনটি অপশনের যে কোনটি বাস্তবায়ন করা হবে।
- মুরতাদ কাফির (হারবি) বন্দি হওয়ার আগেই যদি আত্মসমর্পণ পূর্বক তাওবাহ করে ইসলামে ফিরে আসে তাহলে তানজীম তাকে মুসলিম মনে করে। একজন মুসলিম ইসলাম প্রদত্ত যে অধিকার পায় সেও তাই পাবে। আর মুরতাদ-কাফির অবস্থায় বন্দি হলে তাকে:
- তাকে হত্যা করা হবে।
- অথবা মুসলিম বন্দির সাথে বিনিময় করা যেতে পারে।
- অথবা এই বন্দির বিনিময়ে তার সম্পদ নেওয়া যেতে পারে।
দ্বীন ও উম্মাহর কল্যাণ কামনায় সৎ প্রচেষ্টা ও দুআ অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের বিশুদ্ধ ঈমান-ইলম অনুযায়ী বিশুদ্ধ আমল করার তাওফীক্ব দান করুন। আমাদেরকে সকল অন্যায় পাপাচার-অতিরঞ্জন থেকে দূরে রাখুন। আল্লাহ আমাদেরকে আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছার তাওফীক্ব দান করুন, দুনিয়াতে কল্যাণ-খিলাফাহ দান করুন এবং আখিরাতে মুক্তি দান করুন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরিবার এবং সাহাবী আজমাঈন (রাযিআল্লাহু আনহুম) ও তাদের যথাযথ অনুসারীদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।
-জামাআতুল মুজাহিদীন